পুলিশ আর কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন করার সাহস পাবে না: নুসরাতের মা

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নুসরাত জাহান রাফির পরিবার।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2019, 01:09 PM
Updated : 28 Nov 2019, 01:45 PM

নুসরাতের মা শিরিনা আখতার বলেন, তিনি ঢাকার আদালতে গিয়ে ওসির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে তিনি খুশি হয়েছেন।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালত আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে দুই ধারায় পাঁচ লাখ করে মোট দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও ছয় মাস করে মোট এক বছর সাজা খাটতে হবে।

নুসরাতের মা বলেন, “মানুষ থানায় যায় সাহায্যের জন্য। সেই থানায় আমার মেয়ে নুসরাতের সঙ্গে অন্যায় আচারণ করা হয়েছে। পরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার যে সাহস ওসি দেখিয়েছিল তার বিচার হওয়া উচিত ছিল।

“আদালতে যে রায় দিয়েছে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ রায়ের মাধ্যমে আর কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করার সাহস পাবেন না। এ রায়ের মাধ্যমে নুসরাতের আত্মাও শান্তি পাবে।”

ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

তিনি বলেন, “ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে তার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিফলিত হয়েছে। অপরাধী যে-ই হোক না কেন, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না এ রায় তারই প্রমাণ।

“আমাদের পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। তিনি আমাদের পাশে ছিলেন বলেই আমরা ন্যায় বিচার পেতে সক্ষম হয়েছি।”

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। সে সময় সোনাগাজী থানায় তার জবানবন্দি নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

তার কয়েক দিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন নুসরাতের ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

পরিদর্শক মোয়াজ্জেমই ওই ভিডিও ছড়িয়েছেন- পিবিআইয়ের এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চার মাস আগে এ মামলার বিচার শুরু হয়।

বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় মোয়াজ্জেমকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। আর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ায় ২৯ ধারায় তাকে দেওয়া হয় আরও তিন বছরের কারাদণ্ড।

দুই ধারার শাস্তি একটির পর একটি কার্যকর হবে বলে মোট আট বছর জেল খাটতে হবে বরখাস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে। তবে হাজতবাসকালীন সময় নিয়ম অনুযায়ী সাজা থেকে বাদ যাবে।

এর আগে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে গত ২৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দেয় ফেনীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে শুনানির জন্য ইতোমধ্যে হাই কোর্টে গেছে।