এ বিষয়ে জানতে চাইলে এর লাইব্রিয়ান সাজ্জাদুল করিম বলেন, “১৯৯১ সালে গ্রন্থাগারটি সরকারিকরণের পর ‘জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগার, শেরপুর’ নামে যাত্রা শুরু করে।
“২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর খান বাহাদুর ফজলুর রহমান জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগার এ নামে নবনির্মিত ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।”
উদ্বোধনের ফলকে দেখা যায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এই ভবনটি উদ্বোধন করেন।
২০১০ সালে নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন ফলকে এবং সাইনবোর্ডে খান বাহাদুর ফজলুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হলেও সরকারি কাগজপত্রে তার নাম নাই বলে জানান তিনি।
১৯২৬ সাল থেকে ‘রিডিং ক্লাব’ হিসেবে গ্রন্থাগারটি পরিচিত ছিল। ১৯৮৭ থেকে ৯১ সাল পর্যন্ত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। পরে ১৯৮৪ সালে খান বাহাদুর ফজলুর রহমানের মেয়ে রাজিয়া সামাদ ডালিয়া ২৬ শতাংশ জমি গন্থাগারটির নামে দান করেন বলে জানান তিনি।
গত ১৪ নভেম্বর দেশে স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামো ও নামফলক থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম ৯০ দিনের মধ্যে পরিবর্তন করতে হাই কোর্ট নিদের্শ দিলে এ গ্রন্থাগারের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
গত ২৫ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে অবিহিত করে খান বাহাদুর ফজলুর রহমানের নামে গণ-গ্রন্থাগারের সাইনবোর্ড সরানোর দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয় জেলার সেক্টর কমান্ডারস ফেরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১।
“বর্তমানে হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে ব্রিটিশের তাবেদার, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর খান বাহাদুর নামে তা এখন আর চলতে পারে না।”
প্রয়াত খান বাহাদুর ফজলুর রহমানের মেয়ে রাজিয়া সামাদ ডালিয়া তার বাবাকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে মানতে নারাজ।
“কিন্তু কখনও স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার সমর্থক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন।”
তবে ফজলুর রহমানের স্বাধীনতাবিরোধী কাজের প্রমাণ দিতে গিয়ে শেরপুর জেলার সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর সভাপতি গোলাম মাওলা এবং সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান দাবি করেন, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল যে কয়জন ‘দালাল ও মুসলিম লীগ নেতা’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে শেরপুরে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসেন তাদের একজন খান বাহাদুর ফজলুর রহমান।
এছাড়া একাত্তরের জুলাই মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজীকে শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্কে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খান বাহাদুর ফজলুর রহমান বলে তাদের ভাষ্য।
এছাড়া শেরপুরের শান্তি কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন বলেও তাদের কাছে তথ্য আছে।
তারা জানান, জেলা প্রশাককে স্মারকলিপিতে গ্রন্থাগারটির নাম পাল্টানোসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন।
স্মারকলিপি পেয়ে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব দাবিগুলো খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
সেক্টর কমান্ডারস ফেরাম নেতারা আশা করছেন দাবি অনুযায়ী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এই নাম পাল্টানো হবে।