হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের অপরাধী বললেন এক দণ্ডিত জঙ্গির মা

ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় ফাঁসির রায় পাওয়া এক আসামির মা বলেছেন, জড়িতরা সবাই অপরাধী।

মোমেন মুনি জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2019, 04:19 PM
Updated : 27 Nov 2019, 05:05 PM

বুধবার রায় ঘোষণার পর জয়পুরহাটের স্থানীয় একদল সাংবাদিককে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাদিসুর রহমান সাগরের মা বলেন, “আমার ছেলে হোক আর যেই হোক, যারা হামলা করেছে জঘন্য অপরাধ করেছে।”

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাত আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের কয়রাপাড়া গ্রামে তার বাড়িতে যান।

হাদিসুরদের অস্বচ্ছল পরিবারের চালাতে বাড়ির সাথেই রয়েছে একটি ছোট মুদি দোকান। যেখানে শাড়ি পরিহিত তার মাকে জিনিসপত্র বেচতে দেখা যায়। সাংবাদিকরা পৌঁছালে তিনি দোকান থেকে বাড়ির ভেতরে গিয়ে কথা বলেন।

তিনি জানান, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কয়েক বছর আগে বাড়ি থেকে সাগর নিরুদ্দেশ হন।

মাঝে মধ্যে হাদিসুর বাড়ি এলেও তার চালচলনে বেশ পরিবর্তন দেখেছিলেন বলে জানান তার মা।

“পরে জানা যায় সে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত।”

রায় ঘোষণার আগে আদালতে নেওয়া হচ্ছে জঙ্গি আসলাম হোসেন র‌্যাশ ও হাদিসুর রহমানকে। গুলশান হামলার পরিকল্পনা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

পুলিশ জানায়, তিনি সাগর তার দল নব্য জেএমবিতে জুলফিকার, সাদ-বিন আবু ওয়াক্কাস, আবু আল বাঙ্গালী, আব্দুল্লাহ স্যার, আমজাদ, তৌফিক ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিলেন।

গুলশান হামলার মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১ সালে হাদিসুর রহমান আলিম অধ্যয়নরত অবস্থায় জেএমবিতে যোগ দেন। সংগঠনে দায়িত্বশীল হলে তার নাম ‘সাদ-বিন আবু ওয়াক্কাস’ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে যোগ দেন নব্য জেএমবিতে। সংগঠনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সংগঠনের সদস্যদের মোটর সাইকেল চালানোও শেখাতেন। নব্য জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার ছিলেন তিনি।

গুলশান হামলাকারীদের ঝিনাইদহে মেস ভাড়া করে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে হাদিসুরকে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২২ হন, যাদের ১৭ জনই বিদেশি। হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণ কমান্ডো অভিযানে মারা পড়েন। হামলার পরিকল্পনা ও সহায়তাকারী হিসেবে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার হাদিসুরসহ আটজনকেই বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তার একজন রায়ে খালাস পান।

কয়রাপাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসকের ছেলে হাদিসুর তার তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মেঝ। ২০০৫ সালে কয়রাপাড়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন তিনি। ২০০৭ সালে বানিয়াপাড়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করতে পারেননি। এরপর কিছু দিন একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন তিনি বলে স্বজনরা জানান।

আমদই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহানূর আলম সাবু বলেন, “ছেলেটা অনেকদিন ধরে এলাকাছাড়া ছিল। পরে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার কথা জানতে পারি।”