বগুড়ার অবৈধ ‘হটাৎ মার্কেটে’ উঠে পড়ল ট্রেন, আহত ২

বগুড়ায় রেল লাইনের উপর গড়ে ওঠা ‘হটাৎ মার্কেট’ নামের এক অবৈধ বাজারে ট্রেন উঠে পড়ায় দুই জন আহত হয়েছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2019, 01:19 PM
Updated : 27 Nov 2019, 01:24 PM

বুধবার সকালে বনারপাড়া থেকে আসা আন্তঃনগর ট্রেন ‘দোলন চাঁপা’ বগুড়া রেলস্টেশনে ঢোকার মুখে এ ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার স্টেশন মাস্টার জানিয়েছেন।

বগুড়া ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার বজলুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছে।

এরা হলেন, জেলার গাবতলী উপজেলার রুমি খাতুন (৩০) এবং দুপচাঁচিয়া উপজেলার মানিক (৫৫)।

তাদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আরও কয়েকজনের আহত হওয়ার কথা শোনা গেলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয় এবং সিরাজগঞ্জে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে আগুন ধরার ঘটনাও ঘটে।

বগুড়ায় দুর্ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বগুড়ার রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম জানান, সকাল ১১ টায় আন্তঃনগর ট্রেন দোলন চাঁপা বনারপাড়া থেকে বগুড়ায় আসছিল। সে সময় ‘লালমনি এক্সপ্রেক্স’ নামের অপর একটি আন্তঃনগর ট্রেনও ঢাকা থেকে বগুড়ায় স্টেশনে আসছিল। দোলনচাঁপা ট্রেনটিকে দুই নম্বর লুপ লাইনে এবং লালমনি এক্সপ্রেক্সকে এক নম্বর লাইন দিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়।

এই রেলপথের উপরই অবৈধভাবে কাপড়ের বাজার গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা যাকে ‘হঠাৎ মার্কেট’ নামে চেনে বলে জানান তিনি।

“দোলনচাঁপা ট্রেনটি এক নম্বর লাইন দিয়ে আসবে মনে করে হটাৎ মার্কেটের দোকানদাররা দোকানের তাবু সরান নি। কিন্তু ট্রেনটিকে হুইসেল দিতে দিতে দুই নম্বর লুপ লাইন দিয়ে আসতে দেখে দোকানদার ও ক্রেতারা চিৎকার করে এদিক-ওদিক দৌঁড়ে পালাতে থাকে।”

ট্রেন চালকের পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত ব্রেক করাকে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটনার কারণ মনে করছেন তিনি।

রেল লাইনের পাশের স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবি, গত কয়েক বছরে হটাৎ মার্কেটে ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকজন মারা গেছে। এদের মধ্যে ক্রেতা এবং দোকানদারও ছিলেন।

তারা জানান, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হটাৎ মার্কেটে শীতের কাপড়সহ কম মূল্যের বিভিন্ন কাপড় কিনতে আসে কয়েক হাজার ক্রেতা। বগুড়ায় পুরাতন কাপড়ের এটিই বড় মার্কেট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রেল স্টেশন থেকে ত্রিশ গজ দূরে বগুড়া রেলস্টেশন থেকে এক নম্বর ঘুমটি পর্যন্ত কয়েকশ অবৈধ দোকান রেল লাইনের উপর বসেছে। মূল রেল লাইনের উপর তাবু টানিয়ে এসব দোকান বসানো হয়েছে। ট্রেন চলে আসলেই দ্রুত তাবু সরিয়ে ফেলা হয়।

স্থানীয়রা জানান, রেল থেকে ওইসব দোকান উচ্ছেদ করলেও দুই তিনদিন পরে আবারও দোকান আগের মতই বসে।

অবৈধ মার্কেটের পেছনে কারা?

বগুড়া রেল স্টেশনের প্রাধান বুকিং সহকারী শাহীন আলম বলেন, “রেল লাইনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী ইন্সেপেক্টর রায়হান কবীরের কারণেই রেল লাইনের উপর অবৈধ হটাৎ মার্কেট গড়ে উঠেছে।

“লাইনের উপর নিরাপত্তার দায়িত্ব উনার থাকলেও প্রতিদিন লাইনের উপর মার্কেট দেখার পরেও উনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে দোকানদারদের সখ্য হয়েছেন।”

এ অভিযোগ রায়হান কবীর অস্বীকার করলে তার কাছে লাইনের উপর দোকান দেখেও কেন ব্যবস্থা নেন না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন।”

এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম জানান, গত ১৯ নভেম্বর তারিখের লালমনিহাট থেকে বিভাগীয় ভু-সম্পদ কর্মকর্তাসহ কর্মকর্তারা স্টেশনের পাশের একটি মার্কেটের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার সময় হটাৎ মার্কেট দুইদিন বন্ধ থাকে।

“পরে ২২ নভেম্বর আবারও হটাৎ মার্কেটের দোকানদাররা দোকান বসায়। এ বিষয়ে ২৩ নভেম্বর কর্মকর্তাদের কাছে রেল স্টেশন সীমানার মধ্যে এবং লাইনের উপর অবৈধ দোকান উচ্ছেদের জন্য চিঠি দিই।

রেল লাইনের দুই পাশের ১০ ফুট করে জায়গায় ১৪৪ ধারা সব সময় জারি থাকলেও এসব কেউ মানছে না উল্লেখ করে স্টেশন মাস্টার অভিযোগ করে বলেন, “সিগন্যাল এবং পয়েন্টের তারের উপর অবৈধ দোকান বসার কারণে অনেক সময় ঠিকভাবে সিগন্যাল ও পয়েন্ট করা সম্ভব হয় না।

“অথচ, ট্রেনের আসা যাওয়ার মূল বিষয়টি হলো সিগন্যাল এবং পয়েন্ট।”