বগুড়ায় নট্রামসের পর এবার মুক্তিযোদ্ধা স্কুল

‘জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী’র পর এবার মুক্তিযোদ্ধা নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সরকার। 

জিয়া শাহীনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2019, 04:10 PM
Updated : 26 Nov 2019, 04:17 PM

বগুড়ার বারোটি উপজেলায় তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ’।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পোশাক এবং প্রতিষ্ঠানের সবকিছুরই রং করা হয়েছে পতাকার রং লাল-সবুজে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কেজি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।   

এই প্রতিষ্ঠানে দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সবকিছুর সঙ্গে কম্পিউটার ও কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সরকার ১৯৮২ সালে বগুড়ায় ‘জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী-(নট্রামস) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।

আমাদের দেশের কম্পিউটার প্রচলিত হওয়ার প্রথমদিকে সারা দেশের জুডিশিয়াল সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, ব্যাংক, প্রকৌশল, চিকিৎসাসহ নানা শ্রেণিপেশার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ওই সময় নট্রামসের কম্পিউটার ট্রেনিং খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করা হতো। সরকারিভাবে একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল নট্রামস।

পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ‘জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী’-নেকটার।

আব্দুল মান্নান সরকার নট্রামসের পরিচালক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। বগুড়ার ১২টি উপজেলায় এখন মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আব্দুল মান্নান সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে সেনানিবাসগুলোর অধীনে ক্যান্টোনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, মিলেনিয়াম কলাস্টিকা স্কুল এন্ড কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা হলেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেই।

“সেই ভাবনা থেকেই এই প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছি। নট্রামসের সফলতার পর এখন এই উদ্যোগকে বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে।”

মান্নান বলেন, “২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি। তিনি সাদরে এটা গ্রহণ করেছেন।”

স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী তার এলাকায় এরকম প্রতিষ্ঠান করার ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হককে চিঠি দিয়েছেন বলে মান্নান জানান।

তিনি বলেন, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিজের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া না গেলে তাদের নিকটজনদের অধিকার থাকবে। তারপরও যদি না পাওয়া যায় তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের আগে প্রতিষ্ঠানে যোগ করা হবে।

তিনি আরও জানান, এখন এ ধরনের প্রতিষ্ঠন করার জন্য সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, গাইবান্ধা ও রংপুরসহ অনেক জেলার লোকজন কথা বলছেন।

ধুনটের সোনাহাটা মুক্তিযোদ্ধা স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. হযরত আলী বলেন, “নিজের টাকায় জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠান করেছি। প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত যারা আছেন তারাও সহযোগিতা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি এখন খুব আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।”

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টের অধীনে যুক্ত হতে চাই।”