কক্সবাজারের মহেশখালীতে জলদস্যু ও অস্ত্র তৈরির কারিগরদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “যারা আত্মসমর্পণ করেনি এখনও সুযোগ রয়েছে; তাদের পরিণতি ভালো হবে না।
শনিবার দুপুরে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠে এক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
“আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। হতে পারে সে সংসদ সদস্য। হতে পারে সে বড় রাজনীতিবিদ। হতে পারে প্রশাসনের কোনো ব্যক্তিত্ব। আমরা কিন্তু যার নামেই কোনো ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি তাকেই বিচারের মুখোমুখি করে দিচ্ছি।”
শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সক্রিয় ১২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৯৬ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ১৩টি রাইফেল, একটি দোনলা বন্দুকসহ দেশীয় তৈরি ১৪২টি বন্দুক ও ২৮৩টি গুলি এবং বেশকিছু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম জমা দেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আত্মসমর্পণকারী প্রত্যেক সন্ত্রাসীর কাছে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
আত্মসমর্পণকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা হলেন: হোয়ানকের আয়ুব আলী, কালারমারছড়ার আধারমানিকের আব্দুল করিম ওরফে বদাইয়া, কালারমারছড়া ইউনুসখালীর মো. আব্দুল হামিদ, কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালীর মোহাম্মদ কালু ওরফে গুরা কালু, কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনার মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে কালা জাহাঙ্গীর ও একই এলাকার জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া, বড় মহেশখালী ইউনিয়নের দেবিঙ্গা পাড়ার মাহামুদুল করিম, কালারমারছড়া দক্ষিণ সরদার ঘোনার সিরাজ দৌলা চৌধুরী, হোয়ানকের কেরুনতলীর মান্নান দে স্বপন, কুতুবদিয়া উপজেলার পূর্ব লেমশীখালীর আব্দুল্লাহ মিন্টু, মোহাম্মদ আবুল শামা ওরফে আবু শামা ও নুর মোহাম্মদ।
এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মহেশখালীতে প্রথমবারের মতো ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিল।
আত্মসমর্পণকারী জলদস্যূ সিরাজ-দৌলা চৌধুরী বলেন, “এলাকায় প্রতিপক্ষের হাত থেকে বাঁচতে সন্ত্রাসের পথকে বেছে নিতে হয়েছিল। এটি জীবনে কখনও কাম্য ছিল না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আজ স্বাভাবিক জীবনে আসতে পেরে স্বস্তি লাগছে।”
আত্মসমর্পণ না করা অন্য জলদস্যুদের প্রতি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে সিরাজ বলেন, গত ১৫ বছরেরও বেশি আগে তার ভাই মীর কাশেম চৌধুরী যখন কালারমারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময়ে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়ন চালাত। এক পর্যায়ে নিজেদের অস্থিত্বের পাশাপাশি জানমালের নিরাপত্তায় সন্ত্রাসের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
তবে নিজের অতীত জীবনের অন্ধকার যুগের জন্য অনুতপ্ত একটি জলদস্যু বাহিনীর এই প্রধান।
তার বক্তব্যের পর গত বছর আত্মসমর্পনকারী জলদস্যূ রুহুল আমিন নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এ ব্যাপারে সরকারি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নিবেন। এ ব্যাপারে সরকার সবধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে টেকনাফে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ীর পূর্বশর্তের মতো ‘খুন এবং ধর্ষণ’ ছাড়া জলদস্যুদের নামে থাকা অন্য সবকটি মামলা সরকার তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা নেবে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, মহেশখালীতে আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের নামে থাকা সবগুলো মামলা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে; যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিুবর রহমান, জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি তোফায়েল আহমদ ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল প্রমুখ।