ভোগান্তির ৩ দিন, বাস চলতে শ্রমিকদের বাধা

শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে প্রণীত সড়ক আইন বাস্তবায়নের তৃতীয় দিনে নতুন করে কোনো কোনো জেলায় বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 10:55 AM
Updated : 20 Nov 2019, 01:55 PM

এছাড়া কোনো কোনো জেলায় অল্পকিছু লোকাল বাস চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস কোনো কোনো জেলায় বন্ধ থাকলেও কোথাও কোথাও চলছে।

অনেক জেলায় শ্রমিকদের একাংশ যান চলাচলে বাধা দেওয়ার পাশপাশি ভাংচুর করছেন। চালকের মুখে কালি মাখিয়ে দেওয়ার অভিযোগও এসেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

বগুড়া

নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের প্রথম দুই দিন বগুড়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও তৃতীয় দিন বুধবার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।

আকস্মিক এ ধর্মঘটে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বুধবার বগুড়া টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা ও জেলা পর্যায়ের কোনো বাস, মিনিবাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।

বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি কামরুল মোর্শেদ আপেল বলেন, শ্রমিক ইউনিয়ন কোনো ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। চালকরা নিজেই বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন।

“তবে দূরপাল্লার কিছু বাস চলাচল করছে।”

এছাড়া বিআরটিসি বাস ডিপো থেকে সব সড়কে বাস চলাচল করছে।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে প্রথম দুই দিন সব ধরনের বাস চলাচল করলেও বুধবার থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে রিকশা চললেও যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ। সময়ও লাগছে দ্বিগুণ।

শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে এনা বাস কাউন্টারে অপেক্ষমাণ যাত্রী আবুল কালাম বলেন, “কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া বাস বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ঢাকা যেতে পারছি না। বাসা থেকে বের হয়ে শুধু শুধু কষ্ট করে বাসস্ট্যান্ডে আসলাম।”

তারাকান্দা থেকে আসা কবীর মিয়া নামে একজন যাত্রী বলেন, “এত দূর থেকে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস চলে না। ঢাকায় খুব জরুরি কাজ ছিল। সমস্যায় পড়ে গেলাম।”

ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশাল যাবেন লালু মিয়া নামে একজন যাত্রী।

তিনি বলেন, “সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অটোয় করে ভেঙে ভেঙে ত্রিশাল যাব। এখন অটোচালকরাও ভাড়া দ্বিগুণ করেছে। ১০ টাকা ভাড়া আমাদের গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। সময়ও লাগছে বেশি।”

চালকদের তাগিদ দিলেও তারা তা মানছেন না বলে জানালেন এনা কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. আলম মিয়া।

রাজশাহী

তৃতীয় দিনে রাজশাহীর সড়কে বাস কম দেখা গেছে। তবে সকাল থেকেই ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনার বাস ছেড়ে গেছে।

সকালে শ্রমিক নেতারা উপস্থিত থেকে বাস চালানোর জন্য চালকদের উৎসাহিত করেন। যারা বাস চালাবে না তাদের আর সিরিয়াল দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি করে দেন শ্রমিক নেতারা।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাজশাহী থেকে বাস চালাচল করবে।

“রাজশাহী থেকে যেসব বাস ছেড়ে গেছে সেগুলো কোথাও কোনো বাধা পায়নি বা জরিমানার শিকার হয়নি। তবে কেন বাস বন্ধ রেখে দুর্ভোগ সৃষ্টি করতে যাব?”

মাহাতাব বলেন, একটি পক্ষ বাস বন্ধ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। কিন্তু তা সফল হতে দেওয়া হবে না।

“যে মালিক বাস চালাবেন না তার বাস একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। আর কোনো দিন তাকে বাসের সিরিয়াল দেওয়া হবে না। একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে শ্রমিকদের বিষয়েও।”

তবে বেলা ১২টার দিকে রাজশাহীর নওদাপাড়া আমচত্বর মোড়ে পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

খুলনা

খুলনার পরিবহন শ্রমিক নেতারা বুধবার থেকে বাস চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানালেও বাস চলেনি।

বাস চলবে এমন খবরে শহরের সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রয়্যাল ও শিববাড়ির মোড়ে শত শত যাত্রীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে বিপাকে পড়েছেন।

পরে অনেক যাত্রী ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে চড়েছেন। ফিরে গেছেন আরও অনেকে।

খুলনা সার্কিট হাউসে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের বৈঠকের পর খুলনা মটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেছিলেন, “বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী কয়েক দিন নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নে কিছুটা শিথিল করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

“তাই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চালক ও মালিকদের গাড়ি চালানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। বুধবার থেকে অন্তত অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

কিন্তু শ্রমিকরা নেতাদের কথা কথা রাখেননি।

সকাল ৯টার দিকে শহরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসেছিলেন ইলিয়াছ হোসেন নামে একজন যাত্রী।

তিনি বলেন, “সকালে বাস চলাচল করবে জানতে পেরে আমি গোপালগঞ্জে যাওয়ার জন্য টার্মিনালে এসেছি। এখন শুনছি আজও বাস চলবে না।

“তিন দিন ধরে খুলনায় আটকে আছি। আজ গোপালগঞ্জে আমাকে যেতেই হবে।”

শহিদুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী তার স্ত্রী-মেয়েসহ লাগেজ নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসে বসে আছেন বলে তিনি জানালেন।

শহিদুল বলেন, তারা কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। তার মেয়ে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এত দূরের পথ তারা কিভাবে যাবেন তা বুঝতে পারছেন না।

শরীয়তপুর

ঢাকা-শরীয়তপুরসহ জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

তবে অটোরিকশা, টেম্পো ও ইঞ্জিনচালিত অন্যান্য যান চলতে দেখা গেছে।

গাজীপুর

ঢাকা-ঢাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের অংশে কোনো দূরপাল্লার বাস-ট্রাক না চললেও অল্প কিছু লোকাল বাস দেখা গেছে।

মাওনা হাইওায়ে থানার ওসি মো. আবুল হাসেম বলেন, ভোর ৬টা থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও লরি চলাচল কমতে থাকে।

“সকাল ৮টার পর থেকে ওই মহাসড়কে দূরপাল্লার সকল পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তবে লোকাল কিছু বাস চলতে দেখা গেছে।”

একই খবর দিয়েছেন নাওজোর মহাসড়ক থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, “ঢাকা-ঢাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের অংশে কোন দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি চলছে না। লোকাল বাসও খুব কম।”

বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

 গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক বাকেরা ফাতেমা বলেন, সকালে তিনি জেলা শহর থেকে কলেজে যাওয়ার পথে অনেক কষ্টে কয়েক দফা অটোরিকশা ও লেগুনা পাল্টিয়ে দ্বিগুণ খরচ করে কলেজে পৌঁছেছেন।

এদিকে কেউ কেউ বাস চালাতে টচাইলেও অন্য শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ছেন।

গাজীপুর থেকে ঢাকার মিরপুর রুটে চলাচলকারী বসুমতি পরিবহনের পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, “ট্রাক-লরি শ্রমিকরা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে আমাদের বাসও চলছে না। চলতে গেলে চালকদের তারা পোড়া মবিল ও কালি মেখে দিচ্ছে।”

প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন গাজীপুর থেকে ঢাকার আজিমপুর রুটে চলাচলকারী ভিআইপ পরিবহনের পরিচালক মো. রিপনও।

তিনি বলেন, “আমাদের ছয়টি গাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। এরপর থেকে আমাদের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।”

শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাস চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার থোয়াই অং প্রু মারমা।

টাঙ্গাইল

বুধবার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, মির্জাপুর কালিহাতী, ঘাটাইল এলাকায় কিছু লোকাল বাস ও ট্রাক- অটোরিকশা চলাচল করেতে দেখা গেছে।

তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলতে দেখা যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সকালে ঢাকার কয়েকটি বাস ছেড়ে যাওয়ার পর কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় পরিহন শ্রমিকদের বাধার মুখে ফিরে এসেছে।

জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ জানান, বাস ফিরে আসায় কিছু বাসের টিকিট বিক্রি করার পর যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

ফলে তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে তিনি জানান।

তবে ট্রেনে চালু থাকায় যাত্রীরা সেখানে ভিড় করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ট্রাক চলাচলে বাধা দিচ্ছেন

রংপুর

শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে সব ধরনের যান চলাচলে বাধা দিয়েছেন। অনেক বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়েও দিয়েছেন তারা।

সকালে রংপুর কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাক, লরি ও কভার্ড ভ্যান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি লোকাল বাসস্ট্যান্ডগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচলও বন্ধ দেখা গেছে।

রংপুর জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বাস আটক করছি না। বাসের ড্রাইভাররা নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছেন।

কুমিল্লা

জেলার কোথাও কোনো যান চলাচলের খবর পাওয়া যায়নি।

বেলা ১২টা থেকে শহরের জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন শ্রমিকরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে দু-একটা ট্রাক দেখা গেলেও যাত্রীবাহী যান দেখা যায়নি।

পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ও জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের জন্য হাজারো যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

জেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব তাজুল ইসলাম বলেন, “এটা পরিবহন ধর্মঘট নয়। চালক ও হেলপারদের অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। এটা কোন কেন্দ্রীয় ধর্মঘট নয়।”