বাস বন্ধ: ভোগান্তির ২ দিন

পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনও অনেক জেলায় স্থানীয় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে; তাছাড়া এই দিন কোনো কোনো জেলা থেকে দূরপাল্লার বাসও ছাড়েনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 12:28 PM
Updated : 19 Nov 2019, 02:01 PM

এদিকে মঙ্গলবার সারাদেশে ট্রাক ধর্মঘটের ডাক এলেও কোথাও কোথাও চলাচল করছে।

শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে প্রণীত নতুন সড়ক পরিবহন আইন সোমবার থেকে কার্যকর শুরুর পর বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা।

বাস বন্ধের ব্যাপারে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও চালকরা নিজেরাই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বলে পরিবহন নেতাদের ভাষ্য।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

বেনাপোল

দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও বেনাপোলে স্থানীয় বাস চলাচল করছে না। তাছাড়া মঙ্গলবার বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসও ছাড়েনি।

এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভারত ফেরত যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীরা।

ঈগল পরিবহনের বেনাপোল ব্যবস্থাপক এম আর রহমান বলেন, ঢাকা-কলকাতা ও বেনাপোল থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য স্থানে দূরপাল্লার সব বাস রবি ও সোমবার চলাচল করলেও মঙ্গলবার কোনো বাস বেনাপোল থেকে ছেড়ে যায়নি। ট্রেন ও তিন চাকার যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

মঙ্গলবার ভারত থেকে বেনাপোল এসেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মহাসিন আলি (২৪), ঢাকার মোতালিব হোসেন শান্ত (৪০), সিরাজগঞ্জের গোরকুমার দাসসহ (৪৫) অনেকে।

তারা বাস বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন বলে জানান।

মহাসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে এসে শুনছি দূরপাল্লার বাস বন্ধ। আগে জানলে ফিরতাম না। ট্রেনও চলে গেছে।”

এদিকে মহাসড়কে অটোরিকশা ও নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যান চলতে দেখা গেছে।

নাভারন হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) জহির উদ্দিন বলেন, বাস চলাচল না করায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মামুনূর রশীদ বাচ্চু বাস বন্ধ থাকার কারণ সম্পর্কে বলেন, নতুন সড়ক আইনের কয়েকটি জায়গা সংশোধনের দাবিতে শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি করছেন। এটা কোনো ইউনিয়ন বা ফেডারশনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি না। পরিবহন শ্রমিকরা ইচ্ছামত কর্মবিরতি শুরু করেছেন।

বগুড়া

বগুড়ায় বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ত্রুটিপূর্ণ বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালকরা রাস্তায় না নামায় বাসের সংখ্যা কম দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সোমবার কোনো কোনো রুটে কিছু বাস চলাচল করলেও, মঙ্গলবার পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে স্থানীয় বাস চলাচল। আন্তঃজেলা ও উপজেলা রুটের কোনো বাস ছাড়েনি। তবে অনেক জায়গা ট্রাক ধর্মঘট হলেও জয়পুরহাটে চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবেই। তাছাড়া সকালে ঢাকার বাস ছেড়ে গেছে।

এদিকে বাস বন্ধের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সকাল থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

শহরের বিশ্বরোড মোড়ে অপেক্ষারত শিবগঞ্জ উপজেলা শ্যামপুরের আল আমিন ফিরোজ বলেন, প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। রাজশাহী যাওয়ার যানবাহন পাচ্ছেন না। 

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাস বন্ধ সম্পর্কে বলেন, “বাস বন্ধের ব্যাপারে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত না হয়নি। চালকরা নিজেরাই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।”

খুলনা

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন না করার প্রতিবাদে খুলনায় দ্বিতীয় দিনের মত চলছে চালকদের কর্মবিরতি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

মঙ্গলবার সকালে খুলনার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করেনি। এ সুযোগে অটোরিকশা, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ ছোট যানগুলোয় কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও রয়্যাল মোড়ে বাসগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীরা এসে বাস চলাচল সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু বাস চলাচল কখন শুরু হবে, কেউ তা বলতে পারছেন না।

খুলনা থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় খুলনা রেলস্টেশনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়েও জোর করে ট্রেনে উঠছেন। ট্রেনের একজন চেকার বলেন, যাত্রীদের কাছে টিকিট না থাকলেও ভিড়ের কারণে তাদের কিছু করার থাকছে না।

রেলস্টেশনে সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, তার স্বজনরা ওমরা হজের জন্য ঢাকায় যাবেন। কিন্তু বাস ছাড়ছে না। কিভাবে যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত। তাই রেলস্টেশনে এসেছেন টিকিটের জন্য।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বেবী বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চালাচ্ছেন না। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত শ্রমিকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন।

খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, খুলনা থেকে কোনো রুটেই বাস চলাচল করছে না।

পরিস্থিতি নিরসনে বেলা ১১টায় খুলনার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হেলাল হোসেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে খুলনা সার্কিট হাউজে বৈঠক করেছেন।

নেত্রকোণা

নেত্রকোণায় আন্তঃজেলা বাস চলাচল করলেও স্থানীয় ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে।

সোমবার এখানে বাস চললেও মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই চালকরা বাস চালানো বন্ধ রাখায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।

জেলার কলমাকান্দা থেকে আরিফুর রহমান সকাল ৯টায় পারলা বাসস্ট্যান্ডে যান ঢাকা যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাস না চলায় তিনি যেতে পারেননি।

আরিফুর বলেন, “ঢাকায় বিশেষ কাজ ছিল। স্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস বন্ধ। আগে জানলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিতাম।”

নবারুন সরকার নামে একজন এসেছেন মদন উপজেলা থেকে। তার সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী-সন্তান।

নবারুন বলেন, “আমি ঢাকা যাব। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে স্ট্যান্ডে বসে আছি। চালকরা হঠাৎ কর্মবিরতিতে গিয়ে আমাদের বিপাকে ফেলেছেন।”

সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার সব রুটে সব ধরনের বাস দ্বিতীয় দিনও বন্ধ রয়েছে। যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নছিমন-করিমন ও অন্যান্য ছোট যানে চলাচল করছেন।

জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবু আহমেদ বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দিলে এতে মালিক পক্ষের কিছু করার থাকে না।