‘নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ভয়’ নড়াইলে বাস বন্ধ

আগের চেয়ে কঠোর সাজা রেখে করা নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের দিন থেকে নড়াইলের সাথে দেশের অভ্যন্তরীণ পাঁচটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা।

মাহবুবুর রশিদ, নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 05:40 AM
Updated : 18 Nov 2019, 06:04 AM

সোমবার সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও  নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, “বাস চালক-শ্রমিকরা নতুন পরিবহন আইনের ভয়ে স্বেচ্ছায় অভ্যন্তরীণ পাঁচটি রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি দাবি করেন, “বাস বন্ধ রাখার ব্যাপারে সংগঠনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

তবে বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কোনো রুটে দু-একটি বাস চলছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নড়াইল-যশোর, নড়াইল-লোহাগড়া, নড়াইল-মাগুরা, নড়াইল-নওয়াপাড়া ও নড়াইল-কালিয়া সড়কে রোববার সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে।

গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে আগের আইন কঠোর করে এই আইন করা হয়। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত মাসে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে “সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-র ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর আইন কার্যকরের দিন ধার্য করে। গত বছরের ৮ অক্টোবরে আইনটির গেজেট জারি করা হলেও তার কার্যকারিতা ঝুলে থাকায় এ নিয়ে আদালতে রিট আবেদনও হয়।

এই আইন অনুযায়ী, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর এ সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

তবে দণ্ডবিধির ৩০৪-বি ধারাতে যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

আইনের ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) প্রযোজ্য হবে।

আইনটি প্রণয়নের পর থেকে এর প্রবল বিরোধিতা করে আসছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা ‘অযৌক্তিক’ বেশি।

গত রোববার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি বলেছেন, “আইনের বাস্তবায়ন দুই সপ্তাহ আমরা একটু শিথিল করেছিলাম। অনেকে হয়ত জানে না, কোন অপরাধ, কোন বিশৃঙ্খলার জন্য কী শাস্তিটা পেতে হবে। তার জন্য আমি দু সপ্তাহ সময় দিয়েছি। এখন আজকে থেকে আমাদের এই আইন কার্যকর হবে।”

অন্যদিকে, নড়াইলে রোববার সকালেই নড়াইল প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর জেল-জরিমানা সংশোধনসহ ১১ দফা দাবিতে নড়াইলে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মানববন্ধন এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

ওই মানববন্ধনে বক্তারা প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০৪/খ ধারায় মামলা করা, মোটরযান ও চালকেদের ওপর অধিক অর্থদণ্ড ও জেল-জরিমানা সংশোধনের দাবি ছাড়াও ১১ দফা দাবি জানান।

এর সাত ঘণ্টা পর কোনো ঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকরা নড়াইল-যশোর, নড়াইল-লোহাগড়া, নড়াইল-মাগুরা, নড়াইল-নওয়াপাড়া ও নড়াইল-কালিয়া সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।