মাদারীপুরে বাজারে নতুন পেঁয়াজ, কলিসহ আঁটি ৩০ টাকা

বিমানে করে দেশে আমদানির আগেই কৃষকরা বাজারে আনতে শুরু করেছে ক্ষেতের নতুন অপরিপক্ক পেঁয়াজ।

রিপনচন্দ্র মল্লিক মাদারীপুরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2019, 06:39 AM
Updated : 17 Nov 2019, 07:26 AM

রোববার সকালে মাদারীপুর শহরের পুরান বাজারে আঁটি বেঁধে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়।

এ বাজারের তরকারি বিক্রেতা কালাম খান বলেন, মাদারীপুর শহরের আশেপাশের ক্ষেত থেকে কৃষকরা নতুন পেঁয়াজ তুলে সরাসরি আমাদের দিয়ে যাচ্ছেন।

“আমরা পেঁয়াজের শাকসহ মোটা করে বিক্রি করছি।”

কলি ছাড়াই আঁটি ‘প্রায় আড়াইশ’ গ্রাম পেঁয়াজ আছে বলে জানিয়েছেন অপর বিক্রেতা মোহম্মদ হুমায়ুন।

“প্রতি মোটা পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৩০ টাকা।”

সদর উপজেলার পাচঁখোলার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, বাজারে দাম ভাল থাকায় অপরিপক্ক হওয়ার সত্ত্বেও পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বছরে দেশে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আগেই এর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ১৮ লাখ টন দেশি পেঁয়াজ বাজারে ওঠে। দেশে মোট চাহিদা মেটাতে বছরে ভারত থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

তবে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের নিরূপণ করা ‘দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৮ লাখ টন’ এই পরিসংখ্যান সঠিক নয়। তাদের দাবি প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি।

বন্যায় ক্ষেত ডুবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারত হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।  এর পরপরই ভারত সফরে গিয়ে এক সভায় উষ্মাও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর থেকে ধাপে ধাপে দাম বাড়তে বাড়তে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আড়াইশ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। খুব শিগগির বিমানে করে দেশে পেঁয়াজ আসবে বলেও প্রধানমন্ত্রীও।

পেঁয়াজের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় মাদারিপুর শহরের এই প্রধান কাঁচা বাজারে নতুন পেঁয়াজের এই আঁটি কিনতে পারায় খুশি সাধারণ ভোক্তারাও।

শহরের আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা রঞ্জন বলেন, “নতুন পেঁয়াজের দাম অনেক কম। তাই কিনেছি।

“পুরান পেঁয়াজ যেখানে ২২০ টাকা সেখানে নত‌ুন পেঁয়াজ গড়ে ১২০ টাকায় খেতে পারছি।”

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায় এতে বাজারে পুরোনো পেঁয়াজের দামেও প্রভাব পড়েছে। অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, পুরনো পেঁয়াজও কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কমেছে।

পুরান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, “গতকালও পেঁয়াজ কেজিতে ২৫০ টাকা করে বিক্রি করেছি কিন্তু রোববার সকাল থেকে ২২০ টাকা করে বিক্রি করছি।

“সকালে আড়তে মণ প্রতি পেঁয়াজ ৬শ’ ট‌াকা কমেছে।”

আরেক বিক্রেতা লুৎফর হোসেন বলেন, “রোববার পেঁয়াজ ২১৫ টাকা করে কেজি কিনেছি, ২২০ টাকা করে বিক্রি করছি।”

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি এম এ গফুর বলেন, মাদারীপুরে একটু বেশি দামের জন্য মূলত বোনা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন কৃষকরা।

এসব পেঁয়াজ খুবই অপরিপক্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তবে এই পেঁয়াজ আরো ১৫/২০ দিন পর তুললে আকারে অনেক বড় হত।”

মাদারীপুরের মূলত শিবচরে পেঁয়াজের আবাদ বেশি হয়। চলতি মৌস‌ুমে জেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন বোনা পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে বলে কৃষি দপ্তরের তথ্য।