রাবি শিক্ষার্থীকে মারধরে মামলা, গ্রেপ্তার ১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 06:02 PM
Updated : 16 Nov 2019, 06:02 PM

ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে ‘ছাত্রলীগ কর্মীরা’ ফাইন্যান্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় শনিবার বিকালে সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে তিনজনের নামে মতিহার থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন।

মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, আসামিদের মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আকিমুল ইসলাম রিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

“তবে মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ লাক ও বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির নাহিদ পলাতক রয়েছেন।”

এছাড়া আরও তিন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ওসি জানান।

এদিকে, আহত সোহরাবের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

ডাক্তারের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, “তার সিটিস্ক্যান রিপোর্ট ভালো এসেছে। ডাক্তার বলেছেন সে এখন আশঙ্কামুক্ত।”

সোহরাবের উপর মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রশাসন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে রয়েছেন সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।

তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।

হল প্রসাশনের পক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষক ওমর ফারুককে কমিটির আহ্বায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অন্য সদস্যরা হলেন ফজলুল হক, ফিরোজ আহমেদ ও শফিকুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটির বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ জুলকার নায়েন বলেন, “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে হল প্রশাসন। এছাড়া অভিযুক্ত দুইজনের আবাসিকা বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আর যাকে মারধর করা হয়েছে, সে অসুস্থ থাকায় ৪৮ ঘন্টা সময় নেওয়া হয়েছে যাতে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে করা যায়।”

মামলায় অভিযোগ করা হয়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে ছাত্রলীগকর্মী আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদের নেতৃতে বেশ কয়েজন সোহরাবকে ল্যাপটপ ছুরির অভিযোগে হলের তৃতীয় ব্লকের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তারা সোহরাবকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন।

সোহরাবের বন্ধুরা তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় তার মাথায় ১৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং তার বাম হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছে বলে দাবি করেন তার সহপাঠীরা।

এদিকে, জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে আগামীকাল [রোববার] সকাল ১০টার মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে পুনরায় তারা আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দেন।

তাদের দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে নাহিদ ও আসিফসহ যারা হত্যা চেষ্টায় জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তার ও স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, হল প্রশাসন নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সোহরাবের চিকিৎসা ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেওয়া।