বেগুনে পচন রোগে দুশ্চিন্তায় শেরপুরের চাষিরা

শেরপুরের চরে আগাম গোলবেগুন চাষ ভাল হলেও পচন রোগে চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কৃষি দপ্তর খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

শেরপুর প্রতিনিধিমো. আব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 11:00 AM
Updated : 16 Nov 2019, 11:04 AM

সরেজমিনে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বললে তারা তাদের দুশ্চিন্তা ও অভিযোগের কথা জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

ডাকপাড়া চরের চাষি আব্দুল আজিদ বলেন, “আগাম গোলবেগুন দুই হাজার টেহা মণ দরে বেচা ধরছি। অহন বাজারে প্রতিমণ বেগুনের দাম ১৬০০ টেহা। এ সময় ধরন্ত বেগুন গাছে এবং বেগুনে পচন ধরছে।”

তিনি ১০ বিঘা জমিতে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করে বেগুন আবাদ করেছেন বলে জানান।

“অহন গাছে ও বেগুনে পচন ধরল। বিষ দিয়াও কাজ অইতাছে না। অহন চিন্তার মধ্যে আছি। কৃষি বিভাগের কেউ আমাগরে পরামর্শ দেওয়ার জন্য অহনতরি আহে নাই।”

একই এলাকার আশকর আলী দুই লাখ টাকা খরচ করে কয়েক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন।

“বাগুনের দাম বালাই আছিল। কিন্তু বাগুনের জোয়ার ও গাছ পইচা যাইতাছে গা।  অহন মাতা-মুতা খারাপ। কৃষি অফিসের বিএসরা আহে নাই। আমগরে বাগুনের ক্ষেত দেহে নাই। কোনো পরামর্শ পাইতাছি না।”

উজ্জ্বল মিয়া ধারদেনা করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সাত বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন জানিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত তিনি মাত্র ৫০ হাজার টাকার বেগুন বেচতে পেরেছেন।

“অহন বেগুনক্ষেতে পঁন রোগ দেখা দিছে। চিন্তাই পইরা গেছি গা।”

বেগুন চাষি হামিদুর রহমানেরও অভিজ্ঞতা একই রকম।

“আল্লাহর রহমতে বেগুন ভাল অইছে। গাছও সুন্দর অইছে। চার পাখি জমিতে পৌনে দুই লাখ টেহা খরচ কইরা বেগুন করছি। এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার টেহার বেগুন বেচছি। মাঝে মাঝে বেগুন গাছে পচন ধরছে। কৃষি অফিসারদের অহনও চর এলাকায় আইতে দেহি নাই।”

চর এলাকার আশরাফ আলী এই বেগুন পাইকারি কেনাবেচা করেন।

তিনি ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ দরে বেগুন কিনে ট্রাকে করে ঢাকা পাঠান বলে জানান।

বেগুনক্ষেতে কাজ করেন ওই এলাকার কৃষিশ্রমিক মেরাজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, “কার্তিক মাসে আমগরে তেমন কামকাইজ থাহে না। চাষিরা এলাকায় বেগুন করায় আমরা গরিব মানুষ কাজ করতাছি। মজুরি দৈনিক ৫০০ টাকা। সংসার বালাই চলতাছে।”

কৃষি শ্রমিক আব্দুর রশীদও তাদের দিনকাল ‘বালাই চলতাছে’ বলে জানালেন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, গোলবেগুনের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। আগাম চাষ হওয়ায় চাষিরা দাম বেশি পাচ্ছে।

পচন রোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই জমিতে বেগুন চাষ করায় সমস্যা হচ্ছে। এক বছর বেগুন চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল করে পরের বছর আবার বেগুন চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

“এতে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছি। কৃষিকর্মীরা যাতে ঘন ঘন এলাকায় যান সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”