কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, “তবে তাদের সাহায্যের ব্যাপারে আমরা এখনো জানতে পারেনি।”
চাষিদের জন্য অন্য প্রণোদনার প্রসঙ্গ টেনে পঙ্কজ কান্তি জানান, বুলবুলের আঘাতের আগেই খুলনায় ভুট্টা, সূর্যমুখী, শীতকালীন ও গ্রীস্মকালীন মুগডাল এবং তীল চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া শুরু হয়েছে।
“খুলনার তিন হাজার ৬০০ কৃষক ৩৯ লাখ টাকার বীজ ও সার বিনামূল্যে পাচ্ছেন।
“এই প্রণোদনা কোনো নগদ অর্থ নয়, কৃষক প্রতি পাঁচ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার পাচ্ছেন তারা।”
এরমধ্যে নগরীতে ১১০ জন, রূপসা উপজেলায় ১০৫ জন, বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক হাজার ১০০ জন, দিঘলিয়া উপজেলায় ১৪৫ জন, ফুলতলা উপজেলায় ১১০ জন, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৬৯০ জন, তেরখাদা উপজেলায় ২০০ জন, দাকোপ উপজেলায় ২৫০ জন, পাইকগাছা উপজেলায় ৬৮৫ জন ও কয়রা উপজেলায় ২০৫ জন প্রণোদনা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাবপত্র সব গ্রাম থেকেই আসতে শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে খুলনায় এবার ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন, ৩৬১০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি, ৫০৩ হেক্টর জমিতে কলা, ৩৫৭ হেক্টর জমিতে পেঁপে, ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা ও ৭৯০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়।
‘দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটায়’ ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
পঙ্কজ কান্তি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের মধ্যে রোপা আমনের ক্ষেত রয়েছে ২৫ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি।
এছাড়া ৮৬৪ হেক্টর জমির শাক সবজি, ৫২ হেক্টর জমির কলা, ১০০ হেক্টর জমির পেঁপে, ৪০ হেক্টর জমির সরিষা এবং ৩৬ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খুলনার বটিয়াঘাটায় সরিষা, রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলায় পানের চাষ হয়। খুলনার প্রায় সব উপজেলায় সবজির ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সবজির ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়ায়।
ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী অবস্থায় মাঠে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
কয়রা সদরের ওড়াতলা এলাকার কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, এবার তিনি তিন একর জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন। বুলবুলের প্রভাবে তার পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার মহারাজপুর এলাকার কৃষক কামাল হোসেন আমন আবাদ করেছিলেন দুই একর জমিতে। তারও একই অবস্থা।
কয়রার কৃষি কর্মকর্তা মিজান মাহমুদ বলেন, বুলবুলের কারণে এ পর্যন্ত উপজেলায় এক হাজার ৭২০ হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ১৫০ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় এবং ৭৫০ হেক্টর জমির ধানগাছ মাটিতে হেলে পড়েছে। ধানের ফুল ঝরে পড়েছে ৮০০ হেক্টর জমির।
এছাড়া উপজেলার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত সবজির ৮৫ ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মিজান মাহমুদ আরো জানান, নুয়ে পড়া ধান রক্ষায় কৃষকদের কয়েকটি ধানগাছ এক সঙ্গে গোছা করে বেঁধে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ পদ্ধতিতে ডুবে যাওয়া ধানগাছ পচন থেকে রক্ষা করা পাবে। তবে ফুল ঝরে পড়া গাছগুলোয় চিটা হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে জানান তিনি ।
ডুমুরিয়ার শোভনা এলাকার কৃষক উদয় চক্রবর্তী বলেন, আমন ও শীতকালীন সবজির জমিতে এখনো পানি।
বুলবুলের তাণ্ডবে লাল শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক, করল্লা, উচ্ছে, ক্ষীরা, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন গাছ কাঁত হয়ে জমিতে পড়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি পেঁপে গাছের ক্ষতি হয়েছে। সব পেঁপে গাছ ভেঙে গেছে।
নিজে ঋণ নিয়ে চাষ করা কথা বলতে গিয়ে বলেন তার জানা মতে “এ এলাকার সব কৃষকই ঋণ নিয়ে জমিতে সবজির চাষ করেছিলেন।
রূপসা উপজেলায় ২১৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়।
উপজেলায় শীতকালীন শাক সবজি বিনষ্ট এবং পেঁপে বাগানের অধিকাংশ গাছ ভেঙে পড়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তার হিসেবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান। তবে শীতের সবজি ও পান চাষিদেরও ক্ষতির হিসাবও জমা পড়েছে কৃষি বিভাগে।
সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কৃষক শ্যামসুন্দর মণ্ডল। তার শঙ্কা উপকূলীয় জনপদের অর্থনৈতিক অবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে এই ক্ষতির।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শ্যামসুন্দর বলেন, অনেক আশা নিয়ে ধান চাষ করেছিলাম। ধান প্রায় পেকেও গিয়েছিল। মাস খানেক পরেই ঘরে উঠত কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আমার সব শেষ করে দিয়েছে।
“এ অবস্থায় সংসার চালানোই এখন দুষ্কর।”