রাবিতে ছাত্রলীগের কর্মীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে সহপাঠীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 07:55 AM
Updated : 16 Nov 2019, 09:52 AM

শনিবার সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।

এ মারধরে আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সোহরাব মিয়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মারধরের অভিযোগ উঠেছে আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবির নাহিদ নামে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের বিরুদ্ধে। তারা দুজনই জোহা হল ছাত্রলীগের দায়িত্বে রয়েছেন এবং রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী বলে ছাত্ররা জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “ঘটনাটি জানার পর সকালে আমি সহকারী প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সোহরাবের বন্ধু জুবায়েরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সে সোহরাবের সঙ্গেই আছে।”

চিকিৎসককে উদ্ধৃত করে জুবায়ের জানান, সোহরাবের বাম হাতের কনুইয়ের ওপর ও নিচে দুই জায়গায় ভেঙে গেছে। সোহরাবের মাথার তিন জায়গায় ১৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

“এছাড়া তার পায়েও গুরুতর যখম হয়েছে। এক্স-রে করা হচ্ছে, রিপোর্ট পেলে জানা যাবে পা ভেঙে গেছে কিনা। আর মাথায়ও সিটিস্ক্যান করা হবে।”

আহত সোহরাবকে উদ্ধৃত করে মারধরের ঘটনার বিবরণে তার আরেক সহপাঠী তনয় জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আসিফ লাকের নেতৃতে কয়েজন ছাত্রলীগকর্মী সোহরাবকে হলের তৃতীয় ব্লকের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন আসিফ লাক ও হুমায়ন কবির নাহিদ।

“এক পর্যায়ে তারা দুজন মিলে সোহরাবকে রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। সোহরাব রক্তাক্ত হলে তারা মারধর বন্ধ করে।”

এর দুই দিন আগে ২৫৮ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত বলে জানান তনয়।

তিনি জানান, চুরির ঘটনার পর আসিফ লাক সোহরাবকে ডেকে নিয়ে বলে ‘ওর কাছে হলের বাইরের ছেলেরা আসে। চুরি হওয়া ল্যাপটপ তাকে খুঁজে দিতে হবে।

তনয় আরও বলেন, মারধরের আগে শুক্রবার রাতে আসিফের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী সোহরাবকে তার রুমে খোঁজ করেছিল। তখন তাকে রুমে পায়নি। 

তবে পরে রাতে হলের ছাদ থেতে সোহানসহ তাকে ডেকে নিয়ে যায় বলে সোহরাব জানিয়েছেন।

মারধরের পর সোহরাব তার বন্ধু রিফাতকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানালে তারা এসে রক্তাক্ত অবস্থায়  তাকে উদ্ধার করে জানান তিনি।

“পরে আমরা বন্ধুরা মিলে ওকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।”

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করলেও হলের ২৫৪ নম্বর কক্ষে আহত সোহরাবের সঙ্গে আসিফ লাক কথা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “দুইদিন আগে ২৫৮ কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ চুরি হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই ব্লকে সোহান ও আদিত্য নামে দুই বহিরাগত এসেছিল সোহরাবের কাছে।

“পরে আমি বিষয়টি নিয়ে সোহরাবের সঙ্গে কথা বলি। শুক্রবারও বহিরাগত সোহান এসেছিল। সোহরাব তাকে নিয়ে হলের পানি ট্যাঙ্কের ওপরে গাঁজা সেবন করছিল। এ সময় আমি ওদের দুইজনকে ডেকে নিয়ে ২৫৪ নম্বর কক্ষে কথা বলি।”

ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর রাখছি।

“যদি মারধর করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মারধরের ঘটনা সম্পর্কে জানতে হলের ওই ব্লকের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানিয়েছেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জুলকার নায়েন।

এদিকে অভিযুক্তদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুইপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, সোহরাবকে মারধরকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। সোহরাবের চিকিৎসার ব্যয় ভার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে।

নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষরও পদত্যাগ দাবি করছেন তারা।

বিকালে ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান আবু সাদেক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনাকে গুরুত্বর সাথে নিয়েছে উল্লেখ করে বিক্ষোভকারীদের তিনি আশস্ত করলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রোববারের মধ্যে তাদের দাবি না মানলে আবার আন্দোলনে নামবে তারা।