কর্মকর্তারা বলছেন, বনবিভাগের পুব ও পশ্চিম দুই অংশেই তাদের ভবন, স্থাপনা ও নৌযানের ক্ষতি করে গেছে এই ঝড়।
পুব ও পশ্চিম অংশে ভাগ করে বন বিভাগ সুন্দরবনের দেখভাল করে থাকে। পৃথকভাবে বনের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের ক্ষয়ক্ষতির জরিপ চালাচ্ছেন তারা।
পূর্বাংশে গাছপালার হিসাব ছাড়াই ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি নিরূপণ করেছে বনবিভাগ। তবে পশ্চিম অংশের হিসাব পেতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, “বনবিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের সাতটি স্টেশন ও ৩৩টি টহল ফাঁড়ির নৌযান ও অবকাঠামোগত এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।”
চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ছয়টি আবাসিক ভবন ও ১৭টি অনাবাসিক ভবনের কোনোটির চাল উড়ে গেছে, কোনোটির দেয়াল ধসে পড়েছে বলে জানান তিনি।
স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে থাকা ১০টি জেটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ার, পন্টুন, ফুট ট্রেইলার, গ্যাংওয়ে, হরিণের খাঁচা, পাহারা ঘর ও সোলার প্যানেলসহ ১৯টি স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বনবিভাগের একটি স্পিডবোট ও দুটি ট্রলারের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহীন কবির ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চল পরিদর্শন শেষে ক্ষয়ক্ষতির এ প্রতিবেদন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসানের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের অন্তর্ভূক্ত বনবিভাগের সাতটি স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করলেও তিনি জানান, পশ্চিম অংশে পরিমাণ ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা হয়নি। এ বিষয়ে জরিপ পরিচালনায় দুই-তিন দিন সময় লাগতে পারে।
“তবে কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতির তথ্য এখনো মেলেনি।”
পশ্চিম সুন্দরবনের আওতায় রয়েছে ৩৬টি ক্যাম্প, ফাঁড়ি, রেঞ্জ ও স্টেশন।
এখানকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন ঝড়ে বনের ক্ষতি নিরূপণে জরিপ চলমান উল্লেখ করে জানান, প্রাথমিকভাবে বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাননি।
“ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। জলোচ্ছ্বাস ছিল না তখন। দমকা হাওয়ার কারণে বনের গাছপালা উপড়ে ও ডাল ভেঙে পড়ে।
বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুষ্পকাঠি ফরেস্ট স্টেশনের ঘরের টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কদমতলার এফজি ব্যারাকের টিনের চাল উড়ে গেছে ও রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঠশ্বর অফিসের ছোট ট্রলার নদীতে ডুবে গেছে এবং পাকাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
কোবাদক স্টেশনের কাঠের ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জেটিটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ব্যারাকের চাল ও রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চুনকুড়ির সোলার প্যানেল উড়ে নদীতে ভেসে গেছে। দোবেকি টহল ফাঁড়ির ৪০ ফুট দীর্ঘ পন্টুনটি ভেঙে গেছে। নলিয়ান রেঞ্জ অফিসে যাতায়াতের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অফিসের চারপাশের গাছপালা ভেঙে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন।
চরের অধিকাংশ ঘরই সহজলভ্য বাঁশ, গোলপাতা, হোগলা ও পলিথিন দিয়ে তৈরি। ঝড়ের পর ওইসব ঘর, মাচা, চাল, বেড়া ও পলিথিন উড়ে গেলে তা আবার ঠিক করে নিয়েছেন তারা। এছাড়া মৌসুম মাত্র শুরু হওয়ায় তেমন ক্ষতি হয়নি শুঁটকির বলে জানালেন জেলেরা।
গত ১ নভেম্বর থেকে দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত।
জেলেরা জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বনবিভাগের প্রচার ও প্রস্তুতিও ছিল অন্যান্য দুর্যোগকালীন সময়ের তুলনায় বেশি। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী আগে থেকেই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়। জেলেরাও সতর্ক থাকায় তাদের ট্রলার ও জাল দড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি।
তবে ঝড়ের পর সুন্দরবনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে খুলনার বন সংরক্ষক মঈনুদ্দিন খান বলেন, “সুন্দরবনে আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সীমিত আকারে পর্যটন চলবে। কারণ রাসমেলার আগে ট্যুর অপারেটররা পর্যটক বুকিং নিয়েছিলেন। সেগুলো ছাড়ার জন্যই নভেম্বর মাসে পর্যটন সীমিত করা হচ্ছে।
“আর ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর তিন দিন পর্যটন বন্ধ রাখা হবে।”
খুলনার বন ভবনে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সঙ্গে বনবিভাগের মঙ্গলবারের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইলিশ নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেদের দুই দফায় মাছ শিকার বন্ধ ছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, গত মঙ্গলবার থেকে জেলেদের পাস পারমিট চালু করা হয়েছে।