পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়: ভর্তিচ্ছুদের ‘মেহমানদারির’ ব্যবস্থা

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিখরচায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 05:41 PM
Updated : 14 Nov 2019, 06:20 AM

আগামী শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও গতবছর এবং এবছর ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের বিনা খরচে থাকা-খাওয়া, পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এ উদ্যোগ দেশের সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।    

প্রতিবছর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চরম বিপাকে পড়েন আবাসন নিয়ে। ছোট এই শহরে হোটেল ও সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউজে আগতদের স্থান সংকুলান হয় না। সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়া আদায় করে হোটেল মালিকরা। খাবারের ইচ্ছেমতো মূল্য হাঁকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরাও। ফলে, খাবার ও আবাসন নিয়ে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হন আগতরা।

ভর্তি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দূর্ভোগ লাঘবে তাই এবার পাবনাবাসী এই উদ্যোগ নিয়েছে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জানায়, জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ ও পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামের আহবানে প্রথমবারের মতো পাবনা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জেলা পুলিশ, জেলা পরিষদ, পাবনা সদর উপজেলা পরিষদ, পাবনা চেম্বার অব কমার্স ও বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২০১৯ উপলক্ষে আগত পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আবাসন ও খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আগত সকলের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসন ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করেছে। জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ সমস্ত বিষয়টি তদারকি করছেন।

তিনি জানান, আগতদের অধিকাংশেরই পাবনা শহর অচেনা। সহজে নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি আবাসনে সহজে পৌঁছাতে সাহায্য করার জন্য পাবনা শহরে প্রবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি বুথ খোলা হয়েছে। বাস টার্মিনাল, গাছপাড়া, অনন্ত বাজার মোড়, ট্রাফিক মোড় ও সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার সামনে স্থাপিত বুথে এবং বিভিন্ন আবাসন কেন্দ্রে সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে রোভার, স্কাউটসসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর দুপুর ২টা থেকে পরীক্ষার দিন ১৫ নভেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত সকল আবাসন স্থল ও বুথ সমূহ খোলা থাকবে।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা এবং বিকাল ৩.৩০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই দফায় এ ও বি ইউনিটের পরীক্ষা হবে।

ফারুক হোসেন বলেন, প্রতিবছর এখানে ভর্তি পরীক্ষায় আগতরা খাবার ও আবাসন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য এই বিপুল সংখ্যক অতিথির আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা দুঃসাধ্য ব্যপার।

“বিষয়টি নিয়ে বিব্রত ও দুঃখিত হলেও আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখতে হতো। এবার সে সমস্যা থাকছে না। আশা করছি, পরীক্ষার্থীরা নিরাপদে উৎসবমুখর পরিবেশে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।”

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৫ হাজার শিক্ষার্থী ও সাথে আসা অভিভাবকদের এবার ভোগান্তি পোহাতে হবে না। পাবনার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে সাথে নিয়ে সমন্বয় করে বিপুল সংখ্যক মানুষের মেহমানদারী করা হবে। শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে।”

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনেচ্ছু সকল শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আমাদের মেহমান। তাই তাদের থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব আমাদের। এ কাজে পাবনার সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রোভার স্কাউট, পেশাজীবী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। আশা করছি আমাদের মেহমান ও সন্তানতূল্য পরীক্ষার্থীরা কোনো দূর্ভোগে পড়বেন না।”