‘সেন্টমার্টিনের পরিবেশ বেদনাদায়ক’

পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ‘বেদনাদায়ক, হতাশাজনক’ বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সফরে গিয়ে ফিরে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

আবুল হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 03:56 PM
Updated : 11 Nov 2019, 05:06 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আসফাক আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৫৩ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী ৬ নভেম্বর ওই দ্বীপে শিক্ষা সফরে যান।

আসফাক বলেন, সেন্টমার্টিন সম্পর্কে আগে তাদের যে ধারণা ছিল সেখানে যাওয়ার পর তা পাল্টে গেছে।

“যত্রতত্র পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, কৌটা, পচে থাকা বিভিন্ন ধরনের মৃত প্রাণীসহ নানা রকম নোংরা ও আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখেছি। এগুলোর শেষ গন্তব্য হলো সমুদ্র। এসব নোংরা-অবর্জনা সমুদ্রের পানিকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে, যা মাছ ও জলজ প্রাণিতে সঞ্চারিত হচ্ছে। পরোক্ষভাবে তা আবার মানবদেহে পৌঁছাচ্ছে এবং খাদ্যশৃঙ্খলে প্রভাব ফেলছে। একসময় এসবের পরিমাণ বেশি হলে পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেবে। সামুদ্রিক শৈবাল নষ্ট হবে। এটা বেদনাদায়ক। এটা হতাশাজনক।”

আসফাক তার সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে রোববার সেখানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান বলে জানান।

তারা কয়েক বস্তা অবর্জনা সংগ্রহ করে মাটি চাপা দিয়েছেন বলেও জানান।

এছাড়া দ্বীপটিতে কুকুরের সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেছে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, “এখানে দলে দলে বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরতে দেখলাম। কুকুরগুলো অনেক সময় খাবারের জন্য পর্যটকদের দিকে তেড়ে আসে; নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বাধায়। পর্যটকরা আতঙ্কে ছুটোছুটি করে। এ ধরনের পরিবেশ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পাবে।

“এ দ্বীপে কয়েকশ কুকুর রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার হাবিব উল্লাহ। হাবিব বলেছেন, গত দুই বছরে ১৫-১৬ জন পর্যটককে কুকুর কামড়ে দিয়েছে। শীতকালে কাছিম যখন উপকূলে ডিম পাড়তে আসে তখন কুকুর কাছিম মেরে ফেলে; তাদের ডিম খেয়ে ফেলে।”

কাছিম ক্ষতিকর পোকা খেয়ে সমূদ্রের মাছকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে বলে জানান অধ্যাপক আসফাক আহমদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দলটির শুক্রবার ফেরার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তাদের আটকে দেয়। তারা ফেরেন সোমবার।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমেদ জানান, এ দ্বীপে ছোট বড় কয়েকশ কুকুর রয়েছে। গত দুই বছরে ১৫/১৬ জন পর্যটককে কুকুর কামড়ে দিয়েছে।

“সমূদ্রে বসবাসকারী কাছিম শীতকালে উপকূলে সেন্টমার্টিনের বালির নিচে গিয়ে ডিম পাড়ে। এ সময় ওইসব কুকুর কাছিমকে মেরে ফেলে এবং বালি সরিয়ে ডিমও খেয়ে ফেলে।”

তিনি জানান, কুকুরের তাড়া খেয়ে অনেক পর্যটক সমূদ্রের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েও আত্মরক্ষা করেন। কুকুরের এ উপদ্রপ নিয়ে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে কথা বললেও কোনো সুরাহা হয়নি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সেন্টমার্টিনে কুকুরের উপদ্রপের তথ্য ঠিক। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কুকুর নিধন করা সম্ভব নয়। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় তা নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, আর সেন্টমার্টিনে নামার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সর্বদা পর্যটকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। তারপরও তারা তা মানছেন না। তবে শিঘ্রই সেখানে একটি পরিচ্ছন্নতা কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

তিনি এ ব্যাপারে এখানে আসা সবাইকে সচেতন হতে অনুরোধ জানিয়েছেন।