কে নিচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদের ভাতা?

টাঙ্গাইলে খোরশেদ আলম খসরু নামের এক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা কে তুলছেন তা নিয়ে এক মত নয় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পিবিআই।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2019, 07:20 AM
Updated : 5 Nov 2019, 07:43 AM

পরিবারের অভিযোগ-প্যারালাইসিস আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম খসরুর পরিচয় ধারণ করে তারই ছোট ভাই নবাব আলী ভাতা তুলে নিচ্ছেন।

তবে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পিবিআই পৃথকভাবে ঘটনা তদন্তে নেমে পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন দিয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে-ওই দুই নাম একই ব্যক্তির, অন্য দিকে পিবিআই বলেছে তারা আলাদা লোক।

খোরশেদ আলমের প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তার ছোট ভাই নবাব আলী প্রতারণা করে উত্তোলন করছেন বলে পরিবারের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে আসে খোরশেদ আলম ও নবাব আলী একই ব্যক্তি। “

অন্য দিকে খোরশেদ আলমের দায়েরকৃত মামলায় আদালতের নির্দেশে পিবিআই এর করা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- খোরশেদ আলম ও নবাব আলী একই ব্যক্তি নন। নবাব আলী খোরশেদ আলমের আপন ছোট ভাই।

খোরশেদ আলম টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী মধ্যপাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে।

খোরশেদের স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, “আমার স্বামী প্রায় ২৫ বছর আগে প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য আমার দেবর নবাব আলীর কাছে কাগজপত্র দেওয়া হয়। মাঝে-মধ্যে নবাব আলীর কাছে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি এ সম্পর্কে কিছু জানায়নি।”

খোরশেদের ছেলে মান্নান মিয়া বলেন, ২০০০ সাল থেকে খোরশেদ আলমের নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাকার্ড চালু হয়েছে। তার ছোট চাচা নবাব আলী বিষয়টি গোপন রেখে নিজেকে খোরশেদ আলম দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন

তিন বছর আগে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বয়স্ক ভাতাকার্ড করতে গিয়ে খোরশেদ আলম খসরুর নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাকার্ড থাকার তথ্য জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে মান্নান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নবাব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।

“ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার (খোরশেদ আলম) মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত করে। প্রায় এক বছর ভাতা উত্তোলন স্থগিত থাকলেও রহস্যজনক কারণে আবার তা চালু হয়।”

মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলমের নামে ভাতা চালু রয়েছে এবং তা তোলাও হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, খোরশেদ আলম ও নবাব আলী ‘একই ব্যক্তি’।

কিন্তু তারা যে আসলেপরস্পরের ভাই, সে বিষয়ে বাসাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুন নাহারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি আবার ইউএনওর সাথেই কথা বলার পরামর্শ দেন।

খোরশেদের মেয়ে বিলকিস বেগম বলেন, ‘আমার বাবা অসুস্থ। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই। সে কারণে ছোট চাচাকে ভাতার খোঁজ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রতারণা করে আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চাচা উত্তোলন করছেন।”

গত এপ্রিলে খোরশেদ আলম বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের বাসাইলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়।

পিবিআই-এর এসআই ফরিদ আহমেদ সেই তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন- খোরশেদ আলম ও নবাব আলী এক ব্যক্তি নন। তারা আপন ভাই।

নবাব আলীর বাড়িতে গিয়ে তার ভোটার আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, “কাগজপত্র আমার মেয়ের জামাইয়ের কাছে রয়েছে। আপনারা কিছু জানতে চাইলে ইউএনওর সাথে যোগাযোগ করেন।”

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোরশেদ আলমরা ৮ ভাই-বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে  খোরশেদ তৃতীয় ও নবাব চতুর্থ। দুজনেরই জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুলের উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিশ হলেও কোনো মীমাংসা হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।