চাঁদপুরে দরিদ্র পরিবারের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

চাঁদপুরে এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক সহকারী সচিবের বিরুদ্ধে।

আল ইমরান শোভন চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2019, 03:12 PM
Updated : 4 Nov 2019, 03:17 PM

মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর গ্রামের দরিদ্র শান্তি শীল ও সঞ্জয় শীলের পৈত্রিক বসতভিটার ২৬ শতাংশ জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রশিদ সরকারের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে রশিদ সরকার চাঁদপুর আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করেছেন, যেটাকে হয়রানি করার হাতিয়ার বলছেন তার প্রতিপক্ষ। 

স্থানীয়রা জানান, সাবেক সহকারী সচিব আবদুর রশিদ সরকারকে বদরপুর গ্রামের সঞ্জয়ের বাবা ও চাচা ২৬ শতাংশ জমি লিখে দেন। ওই জমি রশিদ সরকারসহ তার ভাইয়েরা ভোগ করছেন। বিনিময়ে নদীপাড়ের ২৫ শতাংশ জমি সঞ্জয়দের লিখে দেন রশিদের বড় ভাই খালেক সরকার।

তারা বলেন, কিন্তু এই ২৫ শতাংশের মালিক রশিদরা তিন ভাই হওয়ার কথা বলে বদল করা ওই জমি দখল করে তাতে ঘর তোলেন তারা। দখল নির্বিঘ্ন করতে সেখানে একটি স্কুলের নামে ঘর তোলেন। কখনও কখনও স্কুলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। কথিত এই স্কুলে দু-তিনজন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।

সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শিবলু শিকদার বলেন, “তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্কুলের ঘর তুলে হিন্দু পরিবারের জমি দখল করেছেন। আমরা এ বিষয়ে তাকে নিয়ে এলাকায় বসেছিলাম। ওই বৈঠকে তিনি ১৫ দিনের মধ্যে বসে তাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু এখান থেকে গিয়ে তিনি মামলা করলেন।”

এভাবে তিনি আরও অনেক মানুষের জমি দখল করেছেন বলে শিবলুর ভাষ্য।

ক্ষতিগ্রস্ত শান্তি শীল বলেন, “রশিদ সরকারের পরিবার এখানে খুবই প্রভাবশালী। ১৯৯৩ সালে তারা আমাদের পৈত্রিক বসতবাড়ি নিতে চায়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা তার বড় ভাই আব্দুল খালেক সরকারের প্রস্তাবে রাজি হই।

“তিনি এওয়াজ বদলের মাধ্যমে আমাদের পৈত্রিক বসতবাড়ির ২৬ শতাংশ জমি নিয়ে বদরপুর এলাকায় নদীপাড়ে তাদের ২৫ শতাংশ দলিল করে আমাদের বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে এই জমি দলিলমূলে আমরা নাম খারিজও করি।”

শন্তি বলেন, “কিন্তু ২০০৬ সালে রশিদ সরকার অস্ত্র ও তার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের দেওয়া ওই জমির প্রায় ১৪ শতাংশ দখল করে নেন।”

এরপর তিনি এখানে একটি মাজারে আসা ফকিরদেরকে আস্তানা দিয়ে তাদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে শুরু করেন বলে শান্তি জানান।

শান্তি বলেন, সম্প্রতি রশিদ এখানে একটি গালর্স স্কুল করার কথা বলে কিছু ইট বালু এনে কাজ শুরু করেন। তখন তাকে বাধা দিলে তিনি গ্রামের লোকজন নিয়ে মীমাংসায় বসেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য ১৫ দিনের সময় নেন।

“কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য চাঁদপুরে জমিজমা বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।”

শান্তি শীল বলেন, “রশিদ সরকারের ভাই খালেক সরকার যে খতিয়ানমূলে আমাদের সাথে এওয়াজ বদল করেছেন সে খতিয়ানে তিনি ৭০ শতাংশের মালিক। এ হিসাবে আমাদের ২৫ শতাংশ এওয়াজ বদল ঠিক আছে এবং এটি এলাকার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য লোকজনের মাধ্যমেই হয়েছিল। বিষয়টি তিনিও জানতেন।”

এ ঘটনার পর শান্তি শীল জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি জিডি করেছেন বলে জানান। তাদের বেদখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চান।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি নাছির উদ্দিন মৃধা বলেন, ২৬ শতাংশ জমি রশিদ সরকাররা ভোগ করছেন। আর ২৫ শতাংশ হিন্দুদের। আদালতে মামলা চলছে। আদালত যে রায় দেবে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব। এখন যে যেখানে আছে সে সেখানে থাকবে।

এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখতে পুলিশ কাজ করছে বলে ওসি জানান।

চাঁদপুরের আদালতে মামলা

জমির বিষয়ে গত অক্টোবরের প্রথমদিকে সাবেক সহকারী সচিব আবদুর রশিদ সরকার চাঁদপুর দেওয়ানী আদালতে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় বলা হয়, যেই জমি অদল-বদল করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

মামলার প্রেক্ষিতে আদালত ৪ নভেম্বর আবদুল খালেক সরকার, শান্তি শীল, দিলীপ কুমার রায়, সঞ্জয় শীল ও রতন কুমার রায়কে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে শান্তি শীল বলেন, “আমরা আদালতে মামলা সংক্রান্ত একটি কাগজের নোটিশ গত ১৭ অক্টোবর হাতে পেয়েছি। এছাড়া ওই জমিতে আদালত থেকে কোনো কিছু না করার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।”

মতলব উত্তর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারী বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। তারপরও বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।”

এ বিষয়ে কথা বলতে আবদুর রশিদ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।