রাজশাহী পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ: গ্রেপ্তার ৫

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে পুকুরে ছুড়ে ফেলার ঘটনায় পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2019, 05:12 PM
Updated : 3 Nov 2019, 05:12 PM

এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার ইনস্টিটিউটের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গ্রেপ্তাররা হলেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাফি শাহরিয়ার (২৩), সোহেল রানা (২২), বাঁধন রায় (২০), আরিফুল ইসলাম (২৩) ও মেহদী হাসান রাব্বি (২১)।

পলিটেকনিট শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক ও ছাত্ররা পাঁচ দফা দাবি নির্ধারণ করে আন্দোলনে নেমেছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

তাদের দাবিগুলো হলো অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার, তাদের স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল, ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ, শিক্ষক ও ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে পলিটেকনিকের ২৫ ছাত্রকে আটক করা হয়।

“ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করে তাদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষায় ফেল এবং ক্লাশে অনুপস্থিত থাকা পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে ফাইনাল পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার জন্য শনিবার সকালে নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে চাপ দেন। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের তর্কবিতর্ক হয়। এর জের ধরে দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা সৌরভের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চ্যাংদোলা করে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি পুকুরে নিক্ষেপ করে। অধ্যক্ষ তখন মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে নিজের কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, অন্তত ১০ জন তরুণ অধ্যক্ষকে দ্রুতগতিতে পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ অধ্যক্ষের হাত ধরে টানছিল আবার কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে। মূহুর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায় তারা।

পরে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা গিয়ে অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে টেনে তোলেন। এ ঘটনায় রাতে চন্দ্রিমা থানায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অধ্যক্ষ।

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার বিভাগের অষ্টম পর্বের ছাত্র কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেকট্রনিক্সের পঞ্চম পর্বের মুরাদ, পাওয়ারের সাবেক ছাত্র শান্ত, ইলেক্ট্র্যিালের সাবেক ছাত্র বনি, মেকাট্রনিক্সের সাবেক ছাত্র হাসিবুল ইসলাম শান্ত, ইলেকট্র মেডিকেলের সাবেক ছাত্র সালমান টনি, এই বিভাগের সপ্তম পর্বের ছাত্র হাসিবুল এবং কম্পিউটারের সাবেক ছাত্র মারুফ। বাকি আসামিরা অজ্ঞাত।

এদিকে, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত এবং পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী কামাল হোসেন সৌরভকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

শনিবার রাতেই রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাতেই সুপারিশ পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। একইসঙ্গে সভায় পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনার সাথে সৌরভের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাকে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি কল্যাণ কুমার জয়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্তে ছাত্রলীগের আর কারও বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।