অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2019, 02:31 PM
Updated : 2 Nov 2019, 05:27 PM

শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে বলে ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ (৫৪) জানান।

ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকায় দুই ছাত্রের ফরম পূরণ না করায় এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

এ ঘটনায় ফরিদ উদ্দীন বাদী হয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে চন্দ্রিমার থানার ওসি শেখ গোলাম মোস্তফা জানান।

এদিকে, এ ঘটনায় পলিকেনিকের এক ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারসহ এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিতের জন্য জেলা কমিটি কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছে।

ফরিদ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, বেলা দেড়টার দিকে তিনি মসজিদ থেকে বের হয়ে কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন।

“এ সময় পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলে, ‘স্যার কথা আছে। একটু পুকুরের ধারের দিকে আসেন।’ আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে চ্যাংদোলা করে ধরে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে দুইজনের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল।”

পুকুরের ওই জায়গায় ১২-১৪ ফুট পানি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সাঁতার জানি বলে বেঁচে গেছি। সাঁতার কেটে পাড়ে চলে এসেছি। সাঁতার না জানলে হয়ত আজই শেষ হয়ে যেতাম।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা অন্যায় দাবি নিয়ে আসে আমার কাছে। সেসব দাবি না মানায় তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তাদের দাবিগুলো মানার মত থাকে না।

“ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকায় সম্প্রতি দুইজন ছাত্রের ফরম পূরণ হয়নি। সেই দুই ছাত্রের ফরম পূরণ করানোর জন্য সকালে কয়েকজন আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের বিভাগীয় প্রধানের কাছে যেতে বলি। এ সময় তারা আমাকে নিয়ে আমার সামনে অশালীন মন্তব্য করে। এতে আমি তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি কথা বলি। এরপর তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যায়।”

হামলাকারীদের মধ্যে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আটজনের নাম বলেছেন।

এরা হলেন পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কম্পিউচার সাইন্সের অস্টম পর্বের ছাত্র কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেকট্রনিক্সের সপ্তম পর্বের ছাত্র মুরাদ, পাওয়ার বিভাগের সাবেক ছাত্র শান্ত, ইলেকট্রনিক্সের সাবেক ছাত্র বনি, মেকানিক্যালের সাবেক ছাত্র হাসিবুল, ইলেকট্রো মেডিকেলের সাবেক ছাত্র টনি, ইলেকট্রো মেডিকেল বিভাগের সপ্তম পর্বের ছাত্র হাসিবুল ও কম্পিউটার বিভাগের সাবেক ছাত্র মারুফ।

এ ব্যাপারে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কামাল হোসেন সৌরভ পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অন্যদের পদ না থাকলেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে তারা সৌরভের অনুসারী।

রিগেন বলেন, “পলিটেকনিকের ঘটনা লজ্জাজনক। এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের যারা জড়িত তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। ইতিমধ্যেই বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মহানগর কমিটিকে জানিয়েছি। মহানগর কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানোর কথা রয়েছে।”

মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান রাজিব বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাকে বহিষ্কারসহ পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম স্থগিতের সুপারিক করে কেন্দ্রীয় সংসদে পাঠানো হয়েছে।”

এছাড়া ঘটনাটি তদন্তে সংগঠনের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চন্দ্রিমা থানার ওসি শেখ গোলাম মোস্তাফা বলেন, শনিবার রাত ৯টার দিকে অধ্যক্ষ মামলাটি দায়ের করেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সাতজনের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান চলছে।

এছাড়া ফুটেজ দেখে আরও ২০/২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।