তবে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসনিক ভবন বন্ধ থাকলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে।
গত রোববার শুরু হওয়া এ অবরোধ ও ধর্মঘট গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে।
আগামী শুক্র ও শনিবারের সান্ধ্যকালীন ক্লাসগুলোও আন্দোলনের আওতায় থাকবে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রশাসনিক ভবনই কার্যত বন্ধ রয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুই প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপন করা ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চে’ অবস্থান করছেন।
এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। তারা দুই প্রশাসনিক ভবনের বাইরে ঘোরাফেরা করছেন।
উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, নিবন্ধকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা কেউ কার্যালয়ে যাননি।
অন্যদিকে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকরা তাদের ক্লাস-পরীক্ষা নিলেও অনেক বিভাগেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হতে দেখা যায়নি। পূর্ব নির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা বাতিলও করা হয়েছে কয়েকটি বিভাগে।
গত চার দিনেও প্রায় একই ধরনের অবস্থা দেখা গিয়েছে।
আন্দোলনকারীরা তাদের দাবির পক্ষে ক্যাম্পাসে ক্যানভাস প্রদর্শনীও করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য এ বছরের ১ মে ৬টি হলের দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। কাজের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে।
এরপর ছাত্রলীগকে ‘ঈদ সেলামির’ নামে দুই কোটি টাকা চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তিন দফা দাবিতে গত ২৩ অগাস্ট থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
উপাচার্যের অপসারণের আগ পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিতে এ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছেন, আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে কাজ করছি। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার জন্য উপাচার্য নিজেই দায়ী। দুর্নীতির দায় নিয়ে তার অপসারণের মাধ্যমেইে এ অচলাবস্থার সমাধান হবে।”
তবে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসনিক ভবন বন্ধ থাকলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঠিক স্থবিরতা নয়, তবে এক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষায় বাধা দিচ্ছে। তবে এর মাঝেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে।”
চলমান সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনকারী উভয়ের সাথে লিঁয়াজোর জন্য কাজ করছে।”
সাধারণ অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আন্দোলনের কারণে তাদের ক্লাস-পরীক্ষায় বিঘ্ন হলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে প্রশাসন ও আন্দোলকারী উভয় পক্ষে তাদের শিক্ষকরা থাকায় নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাননি।
তারা বলেন, “উপাচার্যের উচিত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করে এবং দায়িত্বশীল জায়গা থেকে পদত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গতি এনে দেওয়া।”
ভিন্নমতও দিয়েছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী।
তারাও নাম না প্রকাশ করে বলেন, এই আন্দোলন অবরোধে তাদের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। তারা সেশনজটের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন। দ্রুত এই অচলাবস্থার অবসান চান তারা।
এদিকে, বুধবার আন্দোলনকারী এক ছাত্র নেতা ও এক নারী শিক্ষার্থীকে এক সহকারী প্রক্টর কর্তৃক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
‘লাঞ্ছনার শিকার’ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় এবং ওই নারী শিক্ষার্থী প্রক্টরের কাছে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে, সেই সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো তার উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
এর প্রতিবাদে প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে একটি মানবন্ধন করেছেন।