গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে কলাবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানায় কুমরিয়া গ্রামে তার বাস।
বড় জোর হাজার দুইয়েক মানুষের বাস কুমরিয়া গ্রামে পৌঁছুতে কলাবাড়ী ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তা হেঁটে যেতে হয়।
২০১৪ সালে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা থেকে অবসর যাওয়ার পর গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন ‘চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগার।’
তার পুত্রবধূর নামে গড়া এই পাঠাগার দেখতে গিয়ে প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সুনীল কুমার গাঙ্গুলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলের বউ প্রথম থেকেই আমাকে আমার মায়ের মত করে সেবা করে।
“আমি তো আর বেশি দিন বাঁচব না। আমি মারা গেলে আমার নাতি যাতে তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে পাঠাগারটি আগলে রাখে সেজন্যই আমি তার নামে পাঠাগারটি করেছি।”
এ পাঠাগারের ‘হাজারের বেশি নিয়মিত পাঠক থাকলেও কারো কাছ থেকে বই পড়ার বিনিময়ে টাকা নেন না তিনি। ‘কেউ স্বেচ্ছায় টাকা দিলে তা দিয়ে পাঠাগারের জন্য বই কেনেন।’
পাঁচ বছর ধরে তার পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক উপজেলার ঘাঘর বাজারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক প্রেমরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এসে সুনীল কুমার গাঙ্গুলী আমাকে বই দিয়ে যান।
“বই পড়া শেষ হলে আবার নতুন একটি বই দিয়ে পুরোনো বইটি নিয়ে যান।”
বই পড়ানোর বিনিময়ে কোনো টাকা-পয়সা না নেওয়া সুনীল কুমার গাঙ্গুলীকে সমাজের বিরল ব্যক্তিত্ব মনে করেন এই পাঠক।
আর্থিক সংকটের কারণে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সংসারের হাল ধরতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিতে হয় সুনীলকে।
জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ‘মানুষ করার ব্রত নিয়ে’ উপজেলা সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ বছর শিক্ষকতা করেন তিনি।
“চাকরি জীবনে আমার এই পাঠাগার করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। অবসর নিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তার শিক্ষকতা জীবনের কথা শোনালেন তারই ছাত্র ঘাঘরকান্দার রাজীব শেখ। তিনি বলেন, “একদিন স্কুলে না গেলে পরদিন বাড়িতে গিয়ে আমাদের খোঁজ নিতেন স্যার।
“বাড়িতে এসে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমি অসুস্থ কি না।’ তা না হলে জানতে চাইতেন, ‘আমি স্কুলে গেলাম না কেন?’
“তার মতো শিক্ষক পেয়ে ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত। এখন তিনি বই পড়িয়ে মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজ করছেন।”
গ্রাম পর্যায়ে এমন পাঠাগারের জন্য প্রশাসনের কিছু করার আছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগারে বই সরবরাহ থেকে শুরু করে সব রকম সহযোগিতা করব। “
সুনীল কুমার গাঙ্গুলীর কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে প্রশাংসার দাবি রাখে বলে মনে করেন তিনি।