সাপের সঙ্গে ‘ঝাপান’

ঢোল আর গানের তালে সাপুড়েরা নাচছে, সেই সঙ্গে দুলছে উদ্যত গোখরার ফণা; রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় সেই দৃশ্য উপভোগ করছে কয়েকশ মানুষ।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2019, 07:33 AM
Updated : 28 Oct 2019, 05:58 PM

গ্রাম বাংলার এই সাপ খেলাকে ঝিনাইদহে বলা হয় ঝাপান খেলা। সদর উপজেলার বাদামতলা বাজারে রোববার বিকালে এই ঝাপান খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেকে।

গল্পে, সিনেমায় বীণ বাজিয়ে সাপ নাচানোর দৃশ্য বাঙালির খুব চেনা। তবে বাস্তবে সাপ আসলে নাচে না। বহিঃকর্ণ নেই বলে সাপ মানুষের মত করে শোনে না। তবে চোয়ালের হাড়ে যুক্ত শ্রবণযন্ত্রে তারা শব্দতরঙ্গ টের পায়। হাত নাড়িয়ে সাপুড়ে যখন নাচের ভঙ্গি করে, বিভ্রান্ত সাপ তখন আত্মরক্ষার তাগিদ থেকেই দুলতে শুরু করে।

এক সময় সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে ছিল নানা সংস্কার, যার কিছু কিছু এখনও আছে। সাপের নাচ নিয়ে বিজ্ঞানের ভাষ্য এখন অনেকেই জানেন, তারপরও ঝাপান খেলা দেখার রোমাঞ্চ কমেনি।   

বাদাম তলা বাজারে বাজার কমিটির আয়োজনে ঝাপন খেলা দেখতে রোববার দুপুরের পর থেকেই ভিড় করে শত শত মানুষ। ছয়টি সাপুড়ে দল অর্ধ শতাধিক সাপ নিয়ে নানা কসরতে মুগ্ধ করে দর্শকদের। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় শৈলকূপা উপজেলার ভাটই এলাকার সোহেল সাপুড়ে।

ঝিনাইদহ শহর থেকে আসা নীলা আশিকী নামের এক গৃহবধু বলেন, “আমি জীবনের প্রথম ঝাপান খেলা দেখছি। খুব ভালো লেগেছে।”

সাদিয়া আফরিন নামে আরেক গৃহবধূ তার বাচ্চাদের নিয়ে এসেছিলেন ঝাপান খেলা দেখতে। তিনি বলছেন, বাচ্চারা খেলা দেখে দারুণ উপভোগ করেছে।

ঝাপন খেলা ঘিরে বাদাম তলা বাজারে রীতিমত উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। অনেকে ছোট ছোট দোকানে খেলনা, খাবারসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসায় তৈরি হয় মেলার আবহ। 

শৈলকূপা থেকে আসা লিটন সাপুড়ে বলেন, “আমাদের মূল পেশা এটা না। আমরা মানুষকে আনন্দ দিই। আর খেলা দেখিয়ে আনন্দ পাই। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ঝাপান খেলা দেখাই।”

আর এ আয়োজন নিয়ে বাদাম তলা বাজার কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য শওকত আলী বলেন, “চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর এলাকার মানুষকে একটু আনন্দ দিতেই এ আয়োজন।”