দোহারে লিজের জমিতে আ. লীগ নেতার চারতলা ভবন

ঢাকার দোহার উপজেলা পরিষদের কাছে এক বছরের জন্য লিজ নেওয়া জমিতে চারতলা ভবন বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব খান ওরফে মোতা খান।

কেরাণীগঞ্জ-দোহার-নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2019, 11:09 AM
Updated : 27 Oct 2019, 05:19 PM

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১২ সালে জয়পাড়া মৌজার আরএস ৮৯১ খতিয়ানের ২২০৯ দাগে ১১ শতাংশ জমি এক বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়।

দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন শিকদারের নামে সাত শতাংশ আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব খানের নামে চার শতাংশ লিজ দেওয়া হয়েছে।

ভূমি কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ বলেন, “লিজের সম্পত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তারা লিজের শর্ত ভঙ্গ করেছেন।”

উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘অস্থায়ী কার্যালয় ও শহীদ মিনার’ বানানোর জন্য এই জমি তাদের লিজ দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।

কিন্তু পরে ওই জমিতে চারতলা ভবন বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে মুক্তি ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।

দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ভবনের জমির পেছনের অংশের সাত শতাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য আমার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন শিকদারের নামে লিজ নেওয়া হয়। আর সামনের অংশের চার শতাংশ লিজ নিয়েছিলেন মোতালেব খান।

“কিন্তু মোতালেব খান নিজস্ব অর্থায়নে এই মোট ১১ শতাংশ জায়গায় চারতলা ভবন করেছেন। কথা ছিল, ওপরে হবে আওয়ামী লীগ কার্যালয়। আর নিচের অংশে দোকানের পজেশন বিক্রি করে ভবনের নির্মাণের ব্যয় তুলে নেবেন মোতালেব খান। কিন্তু জমি যেহেতু লিজের, সেহেতু দোকানগুলোর পজেশন কেউ কিনতে আগ্রহী হননি। এখন ভবনের বেশির ভাগ অংশ মোতালেব খানই ব্যবহার করে ভাড়া তুলছেন।”

মোতালেব খান লিজ নেওয়া জমিতে ভবন নির্মাণের কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমোদন নিয়ে আমি ব্যক্তিগত অর্থায়নে ভবনটি নির্মাণ করেছি।”

কোন ইউএনও তাকে অনুমতি দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি তার নাম বলতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেননি।

দোহার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, “পৌরসভা থেকে ওই ভবন নির্মাণের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।”

এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

তবে ভূমি কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ বলেন, “ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বছর ৪ এপ্রিল তাদের কারণ দর্শানোর প্রথম নোটিশ দেন বর্তমান ইউএনও আফরোজা আক্তার রিবা ম্যাডাম ও তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালমা খাতুন ম্যাডাম।

“পরে তারা নোটিশের জবাব দিয়েছেন। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদের আরেকটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।”

ইউএনও আফরোজা আক্তারও দুই দফা নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বর্তমানে ওই ভবনের ওপরের তালা ফাঁকা থাকলেও তার নিচের তিনটি তালায় রয়েছে মুক্তি ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর একজন মালিক আব্দুস সালাম।

আব্দুস সালাম বলেন, “এই ক্লিনিকের মালিক আমরা একত্রিশ জন। তাদের মধ্যে ভবন মালিক মোতালেব খানও রয়েছেন। তার কাছ থেকে ২০১৫ সালে আমরা চারতলা ওই ভবনটি ভাড়া নিয়ে নিজেদের খরচে ডেকোরেশন করে মুক্তি ক্লিনিক নামে এই প্রাইভেট ক্লিনিক করি। প্রতি মাসের ভাড়ার ৪০ হাজার টাকা আমরা তাকেই পরিশোধ করি।”