তারা সাংবাদিককে একথা বললেও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চাকরি নিতে অনীহার বিষয়টি অবহিত করেননি বলে জানান।
শুক্রবার দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলামকে চাকরি দেওয়ার কথা জানান। ওই সময় চাকরি না নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, দেশব্যাপী সমালোচনার মধ্যে শনিবার রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
সদর উপজেলার যোগিবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন তার গাড়িচালক ছেলেকে চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করাসহ মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে একটি চিঠি লেখেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে। হাসপাতাল থেকে লেখা ওই চিঠিতে তিনি মৃত্যুর পর প্রশাসনের গার্ড অব অনার নিতে অনীহার কথা বলেন। তারপর বুধবার রাতে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। পরিবারের আপত্তির কারণে বৃহস্পতিবার তাকে গার্ড অব অনার ছাড়াই দাফন করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বড় ছেলে নুরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ে ছোটো ভাই নুর ইসলামকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন; কিন্তু এতকিছু ঘটনার পর তার পক্ষে আর চাকরি করা সম্ভব নয়। কারণ বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তাকে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
চাকরি প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানাননি বলে নিশ্চিত করেছেন।
নুর ইসলামের চাচাত ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের অধীনে চাকরির নিরাপত্তা কে দিবে! আবারও কোনো মিথ্যা অভিযোগে চাকরিচ্যুত করলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।”
অভিযোগ শুনলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার
রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছেন।
শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের সদর উপজেলার যোগিবাড়ী গ্রামের বাড়িতে যান জাকির হোসেন।
সেখানে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী, বড় ছেলে, চাকুরিচ্যুত ছেলে নুর ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের মৌখিক অভিযোগ শোনেন।
পরে পরিবারের কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়ে বলেন অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
এ সময় সেখানে থাকা সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লোকমান হাকিম ও দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের লেখা চিঠিসহ চিঠিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
মক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলাম দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক ছিলেন।
নুর ইসলামের ভাষ্য, সহকারী কমিশনারের স্ত্রীর কথামতো রান্না করার পর তা ভালো না হওয়ার অজুহাতে তাকের চাকরিচ্যুত করা হয় এবং তাকে দেওয়া সরকারি বাড়িটিও কেড়ে নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে নুর ইসলামের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুরেও কোনো ফল পাননি। শেষে অসুস্থ অবস্থায় গত মঙ্গলবার তিনি হাসপাতালের বেডে বসে একটি চিঠি লেখেন সাংসদ ইকবালুর রহিমের কাছে। সেখানে তিনি বলেন, তাকে যেন মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়া না হয়।
এরপরদিনই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর যথারীতি জেলা প্রশাসন থেকে গার্ড অব অনার দল তাদের বাড়ি গেলে স্বজনদের বাধার কারণে গার্ড অব অনার দিতে পারেনি। গার্ড অব অনার ছাড়াই বৃহস্পতিবার তাকে দাফন করা হয়।