তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ নুসরাতকে অমরত্ব দিয়েছে: আদালত

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের রায়ে আদালত বলেছে, ‘নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায়’ ওই তরুণীর ‘তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ’ চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2019, 08:38 AM
Updated : 24 Oct 2019, 10:06 AM

বৃহস্পতিবার আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ে নুসরাতের অধ্যক্ষসহ ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিযেছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নুসরাত। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় নুসরাতের মা মামলা করার পর গত ২৭ মার্চ পুলিশ গ্রেপ্তার করে অধ্যক্ষ সিরাজকে।

সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার পক্ষে নামে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনেও সক্রিয় ছিল মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী। মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল বলে নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ।

এর মধ্যেই ৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষা কেন্দ্র সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নুসরাতকে কৌশলে ডেকে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে ঢাকায় এনে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল; টানা পাঁচ দিন যন্ত্রণা সহ্য করে ১০ এপ্রিল মারা যান প্রতিবাদী এই তরুণী।

তদন্ত শেষে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। গত ২০ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরুর পর বৃহস্পতিবার রায় দেন বিচারক।

রায়ে তিনি বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ফেনী জেলার অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপীঠ। দুই হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়ালেখা করছে।

“এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলোকজ্জ্বল ভূমিকায় কালিমা লিপ্তকারী এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে।

“তার এ অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি আসামিদের ঔদ্ধত্য কালান্তরে মানবতাকে লজ্জিত করবে নিশ্চয়। বিধায়, দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতম শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য।”

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (১)/৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।

মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে এবং জরিমানার অর্থ আদায় করে নুসরাতের বাবা-মাকে দিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।