ভোলার সেই শুভর ভগ্নিপতি ‘নিখোঁজ’

যার ফেইসবুক হ্যাক হওয়ার পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংসতা ঘটানো হয়েছে, সেই বিপ্লবচন্দ্র বৈদ্য শুভর ভগ্নিপতি ও তার দোকানের কর্মচারী নিখোঁজ জানিয়ে থানায় জিডি হয়েছে।

ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2019, 12:39 PM
Updated : 22 Oct 2019, 03:38 PM

জেলার দুলারহাট থানার ওসি মিজানুর রহমান পাটোয়ারী জানান, শুভর ভগ্নিপতি বিধান মজুমদার (৩৫) ও তার দোকানের কর্মচারী সাগর (১৮) নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের থানায় মঙ্গলবার দুপুরে এই জিডি করেছেন বিধানের বাবা বিনয় ভূষণ মজুমদার।

দুলারহাট থানার রৌদের হাটে ‘মা জুয়েলার্স’ নামে বিধানের একটি দোকান রয়েছে। বিধান ও সাগর লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ গ্রামের বাড়ি থেকে সোমবার সকালে সেই দোকানে যান।

ভোলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ভোলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অবিনাশ নন্দী বলেন, সোমবার বিকেলে মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন লোক বিধানের দোকানে গিয়ে একটি বেসরকারি টিভিতে সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা বলে ডেকে নেয়। তারা তার কর্মচারী সাগরকেও নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন।

তবে পরে বিধানের বাবা বিনয় ভূষণ ওই বাজারের কয়েকজন দোকানির বরাতে বলেন, বিধান ও সাগরকে সিভিল পোশাকধারী সাত-আটজন লোক ডিবি পরিচয় দিয়ে কালো একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।

“পরে লালমোহন ও চরফ্যাশন পুলিশ সার্কেল কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা তাদের নেননি।”

স্থানিয় আবুবকরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জমাদার বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর বরাতে বলেন, “র‌্যাব ও ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক বিধানকে গাড়িতে তোলেন। এ সময় কয়েকজন ব্যবসায়ী বিধানকে কী কারণে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, তাদের বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে।”

তবে পুলিশ আটকের বিষয়ে কিছু জানে না বলে ভাষ্য।

চরফ্যাশন থানার ওসি শামছুল আরেফিন বলেন, “বিধান ও সাগরকে তুলে নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”

একই কথা বলেন দুলারহাট থানার ওসি মিজানুর রহমান।

ওসি মিজানুর বলেন, তারা জিডির পর বেতার বার্তার মাধ্যমে দেশের সব থানায় খবর পাঠিয়েছেন। পুলিশ তাদের খুঁজছে।

শুভর ফেইসবুক আইডি ‘হ্যাক করে অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে রোববার ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা শহরে সমাবেশ ডাকা হয়। সেখান থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় কয়েকশ মানুষ। দফায় দফায় সংঘর্ষে এক মাদ্রাসাছাত্রসহ চারজন নিহত হন; আহত হন ১০ পুলিশসহ শতাধিক।

সেই থেকে সোমবার দিনভর বোরহানউদ্দিনে থামথমে অবস্থা থাকলেও মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জেলার সব মন্দির ও হিন্দুপ্রধান এলাকায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে বলে পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগ ভোলার উপ-পরিচালক মামুদুর রহমান বলেন, তিনি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। বুধবার প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সম্ভব না হওয়ায় তারা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে নেবেন বলে তিনি জানান।