গোপালগঞ্জে মহাসড়ক ভাঙছে, পাত্তাই দিচ্ছে না বালু ব্যবসায়ীরা

বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্বে গোপালগঞ্জে মহাসড়ক ভেঙেচুরে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়লেও প্রতিকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2019, 06:45 AM
Updated : 20 Oct 2019, 06:46 AM

জেলার কাশিয়ানীতে ঢাকা-বোনপোল মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া-কালনা অংশে ‘সাড়ে তিন কিলোমিটার’ এলাকা চলাচল অনুপযোগী হয়ে গেছে।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খ ম শরিফুল আলম বলেন, “বারবার প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের ‘অবৈধ ব্যবসা’ সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে কিন্তু তারা এতে কোন কর্ণপাত করেনি।

“সড়ক ভেঙে, বালু উড়ে এ সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচলই দায় হয়ে পড়েছে।”

ঢাকা, বেনাপোল বন্দর, যশোর, খুলনা, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার যোগাযোগের ঢাকা-বোনপোল মহাসড়কের দু’পাশে সড়ক বিভাগের জায়গা দখল করে ৩৫টি বালুর চাতাল গড়ে ওঠে। পাঁচ বছর আগে গড়ে তোলে এস সব চাতালের মালিকরা কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।

তাদের একজন রঞ্জু শেখ স্বীকার করেন সড়ক বিভাগ কয়েক বার বালুর চাতাল সরিয়ে নিতে বলেছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বালু সরিয়ে নেওয়ার জায়গা নেই, তাই আমরা সরিয়ে নিতে পারিনি।

একটির উন্নয়ন করতে গেলে আরেকটির ক্ষতি হতেই পারে দাবি করে তিনি বলেন, “সড়কের ক্ষতি হয়েছে, এটি মেনে নিতে হবে।”

এসব বালু দিয়ে পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোচ ও ঢাকা-গোপালগঞ্জ রেল লাইনের কাজ হচ্ছে বলের জানান তিনি।

সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বালুর পানি রাস্তায় জমা হচ্ছে। এতে রাস্তার পিচ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের অভিযোগ-ব্যবসায়ীরা ‘৩০/৪০ টনের ভারি’ ট্রাকে বালু পরিবহন করছেন। পাশাপাশি তারা ওই সড়কে এস্কেভেটর চালাচ্ছেন।

এ কারণে সড়কের ‘প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক থেকে পিচ, বালু খোয়া, পাখর, ইট উঠে মাটি বেরিয়ে গেছে।’

এসব কারণে রাস্তায় ‘আরো আড়াই কিলোমিটার জুড়ে’ অসংখ্য ছোট-বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর একটি ট্রাক গর্তে উল্টে যাওয়ার খবর উল্লেখ করে খানজাহান আলী পরিবহনের চালক ওসমান (৫০) বলেন, “রাস্তার বড় বড় গর্তের মধ্য গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।”

কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের নাজমা বেগম (৫০) বলেন, “গাড়ি গেলেই বালু উড়ে কুয়াশার মত অন্ধকার হয়ে আসে।

“এতে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষের পথ চলতে দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে হাঁচি-কাশি শিকার হয়েছে বলে জানালেন ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গার মো. আমজাদ হোসেন (৬০)।

ভ্যান চালক শংকরপাশা গ্রামের  মিজানুর রহামান (৫০) বলেন, ভাঙা সড়কে কেউ ভ্যানে উঠতে চায় না। আমাদের জীবন জীবিকা বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

কাশিয়ানী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান বলেন, “এ দশার দায়ী বালু ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশে পাহাড় সমান উঁচু বালু মজুদ করে অবৈধ ব্যবসা করে আসছে। নির্বিচারে সড়কে হেভি ওয়েট ট্রাক ও ভেকু মেশিন চালাচ্ছে। ফলে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে।”

প্রতিকারের ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল বলেন, “এ থেকে প্রতিকার পেতে আমরা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার চিন্তা করছি।

“অচিরেই ওই ৩৫ বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।”