হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বড়কুল ইউনিয়নের দক্ষিণ রায়চোঁ গ্রামের মুন্সী বাড়ির মো. দুলাল হোসেন এবং কোহিনুর বেগমের তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মেয়ে পান্না আক্তার। বাবা দিনমজুর ও মা অন্যের বাসায় কাজ করে কোন রকমে সংসার চালিয়েও ছোট মেয়ে পান্নাকে পড়িয়েছে।
এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে পান্না হাজীগঞ্জ উপজেলার বেলচোঁ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে হাজীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেন।
পান্না মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেখা দেয় সংকট। মেডিকেলে পড়ার খরচ যোগাবার উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না এই দরিদ্র পরিবারটি। মেধাবী ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে তার শিক্ষকরা ফেইসবুকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিত্তবানদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষকরা।
ফেইসবুকের এই পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এই বাধা দূর হয় চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমানের উদ্যোগে।
ভর্তির সামর্থ তার পরিবারের ছিল না উল্লেখ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে পান্না বলেন, “আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি মানুষের একজন।
“পড়ালেখায় ভালো বলে স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকরা আমাকে অনেক সাহায্য-সহায়তা করেছেন। তাদের সহায়তার না পেলে আজ আমি এতো দূর আসতে পারতাম না।”
এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার পরে কলেজের স্যাররা তাকে কুমিল্লায় এক ম্যাডামের বাসায় রেখে মেডিকেলে ভর্তির কোচিং করিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
হাজীগঞ্জ উপজেলার রায়চোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন শামীম বলেন, “তার এই অসামান্য সাফল্যে আমরা অত্যন্ত খুশি।
“বিত্তবানদের সহযোগিতায় মেয়েটি যদি উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করতে পারে তাই আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছি।”
পান্নার মা কোহিনূর বেগম সাংবাদিকদের বলেন, এমপি স্যার ও ডিসি স্যার মোবাইল ফোনে আমাদের সাথে কথা বলেছেন। তারা আমার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।
পান্না ও তার পরিবারের সাথে গত বৃহস্পতিবার মোবাইলে কথা বলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া পান্নার ভর্তি হতে যত টাকা লাগবে তার পুরোটাই চাঁদপুর জেলা প্রশাসন দেবে।
“সে যেই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে আমি সেই কলেজের সভাপতি হিসেবে পরবর্তীতে আরও সহযোগিতা করব।”
তিন বোনের সবার ছোট পান্না ‘আদর্শবাদ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন’ দেখে।