শনিবার সকালে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে উপজেলার আক্চা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি শুক নদীর উপর নির্মিত বুড়ি বাঁধ এলাকায়।
কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল ও মাছ রাখার খালুই।
যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও মাছ ধরতে নেমে গেছেন কাঁদায়। আর নদীর পাড়ে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছে মাছ ধরা দেখতে।
১৯৮০ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট (স্লুইসগেইট) নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়।
“৫০ একর এলাকা জুড়ে থাকে মাছের এই অভয়ারণ্য।
“সারা বছর কাউকে এখানে মাছ ধরতে দেওয়া হয় না। শুধু পানি ছেড়ে দেওয়ার পর এ সময়ই মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়।”
এই মাছের অভয়ারণ্যের এসব পোনার দেখভাল করে থাকে আক্চা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ।
প্রত্যেক বছরই বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার উৎসবে মাতে ঠাকুরগাঁও শহরসহ বিভিন্ন জেলার অনেক মানুষ বলে জানালেন চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এখানে মেলা জমে যায়।
“পানিতে যখন জাল পড়তে থাকে, এ দৃশ্য দেখে মন ভরে যায়।”
“এদিন গ্রামবাসীর জন্য মাছ ধরা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় “
মাছ ধরতে নীলফামারী থেকে এসেছেন রমজান আলী। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছর এই দিনে আমি এখানে মাছ ধরতে আসি।
এবার পাঁচজন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। চাবিজাল দিয়ে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ‘প্রায় ২০ কেজি’ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরেছেন তারা।
সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ছেলে খাদেমুলসহ মাছ ধরেছেন পঞ্চগড় থেকে আসা নাইমুল হক।
তিনি বলেন, ছয় কেজি মাছ ধরেছি।
তার ঝুড়িতে বোয়াল, জাপানি রুই, তেলাপিয়া, ট্যাংরা, পুঁটি, শিং, কৈ, মাগুর, শোল মাছের চোখে পড়ে।
“মাছ যেমনই হোক না কেন, মাছ ধরার আনন্দটা সবচেয়ে বেশি।”
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে সেখানে মাছ কিনতে আসা সোহেল রানা বলেন, বুড়িরবাঁধে মাছ ধরার কথা শুনে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে এসেছি, মাছ কিনতে।
তিনি তিন কেজি পুঁটি মাছ কিনেছেন ৩৬০ টাকায়। দুই কেজি কৈ মাছ কিনেছেন চারশ’ টাকা দিয়ে।
“মাছ কেনার চেয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখে মন ভরে গেছে।”
শনিবার ভোর থেকে মাছ কিনেই চলেছেন মাছের পাইকার সিরাজুল ইসলাম।