সালিশে ৫ ছাত্রের মস্তক মুণ্ডন, কান ধরে উঠবস

একটি তুচ্ছ ঘটনার সালিশে সিরাজগঞ্জে পাঁচ স্কুলছাত্রের মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সালিশে ওই ছাত্রদের কান ধরে উঠবসও করানো হয়।

ইসরাইল হোসেন বাবু সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2019, 04:34 PM
Updated : 14 Oct 2019, 04:34 PM

গত শুক্রবার উল্লাপাড়া উপজেলার জংলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই সালিশ বৈঠক হয় দুর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফসার আলীর নেতৃত্বে।

এই পাঁচ শিক্ষার্থী হলো দুর্গানগর ইউনিয়নের বালশাবাড়ি গ্রামের হাজী আমিনুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। সবার বয়স ১৪/১৫ বছর।

রোববার এলাকায় গিয়ে ওই পাঁচ ছাত্র, তাদের অভিভাবক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধুপুর গ্রামের ওই পাঁচজন প্রতিদিন সকালে কোচিং ক্লাসের উদ্দেশ্যে জংলীপুর এলাকায় যায়। একই সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে পাশের বালশাবাড়ি গ্রামে কোচিং করতে যায় জংলীপুর গ্রামের মনছুর রহমানের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও তার চাচাত বোনসহ ১০ম শ্রেণির আরও তিনজন শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা জানান, যাতায়াতের পথে তাদের মধ্যে কয়েকবার ধাক্কাধাক্কি ও তর্ক-বিতর্কের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তরিকুলের চাচা মুছা বাদী হয়ে থানায় ওই পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এই পাঁচজনের একজনকে পুলিশ আটক করে সহকারী কমিশনারকে দেয়। সহকারী কমিশনার অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান আফসার আলীকে বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব দেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তরিকুল এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। সে প্রতিদিনই রাস্তায় যাতায়াতের সময় আমাদের শরীরে সাথে ধাক্কা দিত। প্রতিবাদ করলেই তর্ক-বিতর্ক হতো। ওই কারণে তরিকুলের চাচাত বোনকে উত্ত্যক্ত করা হয় বলে একজনের নামে থানায় মিথ্যা ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করেন তরিকুলের চাচা।  

ভুক্তভোগী দুই ছাত্রের বাবা বলেন, সালিশ বৈঠকে প্রভাবশালী মজনু উল্লাপাড়া থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হন এবং প্রভাব খাটিয়ে তারা একতরফা বিচার করেন।

সেখানে তাদের পক্ষের কাউকে কিছু বলতে দেওয়া হয়নি বলেও তারা অভিযোগ করেন।

সালিশ বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস, জাকারিয়া, আমিন ও রাসেল বলেন, সালিশ শুরুর আগেই ওই পাঁচ ছাত্রের মাথা ন্যাড়া করা হয়। তারপর সালিশের রায়ে তাদের ১০ বার কান ধরে উঠবস করানো এবং শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয়।

থানায় উত্তক্ত্যের অভিযোগকারী আবু মুছা বলেন, “আমার মেয়ে ও ভাতিজাসহ অন্যরা কোচিং করতে যাওয়ার পথে ওই ছাত্ররা তাদের ধাক্কাধাক্কি করে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করেছিলাম।”

উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান কওশিক আহমেদ বলেন, এক ছাত্রকে আটক করে থানায় আনার পর ইভটিজিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের জন্য তাকে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠানো হয়েছিল।

“তারপর কী হয়েছে আমার জানা নেই।” 

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব হাসান বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আনা হলেও তা প্রমাণিত হয়নি। উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছিল। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিষয়টি আমলে না নিয়ে মীমাংসার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।”

ইউপি চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেন, “আমি চুলকাটার নির্দেশ দেইনি। ওই ছেলেদের চুল বড় হওয়ায় তাদের চুল কেটে সালিশ বৈঠকে আসতে বলা হয়েছিল।

শালিসী বৈঠকের দ্বিতীয় দফায় কান ধরে উঠবস ও শারীরিক শাস্তির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “এটুকু সাজা না দিলে কিসের বিচার করলাম।” 

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি অমানবিক। এভাবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। বিষয়টি আমি অবগত নই। এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”