গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়: এবার সেই ভিসির ভাতিজার পদত্যাগ

শিক্ষার্থীদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়াসহ নানা অভিযোগে আন্দোলনের মুখে এবার গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ পদত্যাগ করেছেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2019, 02:41 PM
Updated : 13 Oct 2019, 02:48 PM

রোববার বিকাল ৪টায় বিভাগের চেয়ারম্যানের পদে তিনি ইস্তফা দেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক নুরউদ্দিন আহমেদ।

খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ শিক্ষার্থীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগকারী উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের আপন ভাতিজা।  

ফেইসবুকের একটি লেখা নিয়ে এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কয়েকদিন আগে পদত্যাগ করেন খোন্দকার নাসির।

রোবাবর সকাল থেকে বিভাগের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ

শিক্ষার্থীরা বলেন, খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ ২০১৭ সালে প্রথমে সেকশন অফিসার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে অনার্স ও মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। মাত্র দেড় বছরেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করলেও চেয়ারম্যান হওয়ার পর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন এই শিক্ষক। কথায় কথায় শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দেন। নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষায় অকারণে নম্বর কম দেন।

এ বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াস্তি আহমেদ হৃদয় বলেন, “তিনি সম্প্রতি একটি কোর্সের অ্যাসাইনমেন্টে ৩৪ জনকে শূন্য দিয়েছেন। আমরা যখন কারণ জানতে চেয়েছি তিনি বলেছেন তার ইচ্ছে হয়েছে তাই শূন্য দিয়েছেন। একজন শিক্ষক কীভাবে এমন হতে পারেন! তার আচরণে মনে হয়েছে আমরা তার খেলার পুতুল।”

৩য় বর্ষের  শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা বলেন, “তিনি ভিসির ভাতিজা হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ক্লাসেও ঠিকভাবে পড়াতে পারেন না। উইকিপিডিয়া দেখে দেখে বানান করে পড়ান। এছাড়া কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলেই রেগে যান, হুমকি দেন শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেওয়ার। আমরা তার পূর্ণ পদত্যাগ চাই।”

শুধু চেয়ারম্যান পদ ছাড়লে হবে না, তিনি শিক্ষক পদ থেকে ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান এই শিক্ষার্থী।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ বলেন, “অনার্স ও মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি রয়েছে এ কথা সত্যি। কিন্তু আমার নিয়োগ অবৈধ নয়। কারণ নিয়োগের সময় যোগ্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত শিথিলযোগ্য রয়েছে। 

“বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চলমান থাকায় এবং রবীন্দ্র জার্নালে চারটি প্রকাশনা থাকায় অধিকতর যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিবেচনা করা হয়েছে।”

এর আগে সকালে আন্দোলন শুরুর পর ঘটনাস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. রাজিউর রহমান। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ লিখিতভাবে জমা দিতে বলেন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। প্রক্টরের আশ্বাসে লিখিত অভিযোগে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি আমার কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। আমি এটি ভিসির কাছে পাঠিয়ে দেব।”

ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। গত ৭ অক্টোবর ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহজাহান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান।