বিএনপি নেতার ‘দখলে’ জমি,  পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন

শরীয়তপুরে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 06:15 AM
Updated : 10 Oct 2019, 06:15 AM

আর এই জমির গাছ ও পুকুরের মাছ বিক্রির অভিযোগে ভূমি অফিস থেকে অভিযোগ দিলেও দৃশ্যমান পুলিশী তৎপরতা না দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

গোসাইরহাট উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অর্পিত সম্পত্তিভূক্ত এক একর ৩০ শতক সরকারি জমির উপর অবৈধভাবে ভবনও নির্মাণও করেছেন গোসাইরহাট থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন সরদার।

তার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে পুকুরের মাছ ও বাড়ির গাছ বিক্রির থানায় অভিযোগও করেছেন গোসাইরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মতিউর রহমান।

তবে ‘সরকারি নিয়ম মেনেই’ এই সম্পত্তি ভোগ-দখল করছেন বলছে তার ছেলে মো. মিজানুর রহমান।

এই সম্পত্তি তার বাবার নামে লিজ বন্দোবস্ত রয়েছে দাবি করে মিজানুর বলেন, “বর্ণিত অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় উপজেলা ভূমি অফিস আমাদের কাছ থেকে লিজের টাকা গ্রহণ করছে না।

“আমাদের লিজ বাতিল হয়নি।

তবে তিনি ওই অর্পিত সম্পত্তি থেকে গাছ ও মাছ বিক্রি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বারবার ফোন করলেও তার বাবা কেন ধরছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার বাবা অসুস্থ বলে ফোন ধরেনি।”

তবে গোসাইরহাট উপজেলা ভূমি অফিস ও ইদিলপুর ইউনিয়ন তহশীল অফিস থেকে পাওয়া তথ্যে এ দাবির সত্যতা মিলছে না।

এসব অফিস থেকে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলার ৬৩ নং দাসের জঙ্গল মৌজার ২৭৯ নং এসএ খতিয়ানে ২৫৩ নং দাগে ৯২ শতাংশ বাড়ি এবং ২৭৬ নং এসএ খতিয়ানের ৩৫৪ নং দাগের ৩৮ শতাংশ ভিটাসহ মোট এক একর ৩০ শতাংশ জমি সরকারের কাছ থেকে ১৯৮৫ সালে লিজ নেন বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরদার।

এরপর বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তির লক্ষ্যে শরীয়তপুর জেলা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করলে চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত তা খারিজ করে দেয় ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিলে।

লিজের সম্পত্তির কোনো শ্রেণি বা আকৃতি পরিবর্তন করার নিয়ম নাই উল্লেখ করে গোসাইরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মতিউর রহমান বলেন, আলাউদ্দিন সরদার লিজকৃত জমিতে পাকা ইমারত নির্মাণ করে লিজের শর্ত ভঙ্গ করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের ২০ অগাস্ট তার লিজ বাতিল করে। ”

সম্প্রতি এ জমির পুকুর থেকে ‘আড়াইল লাখ টাকার’ মাছ এবং ‘লাখ টাকা বেশি দামেও সাতটি গাছ’ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিএনপির নেতার ওই ছেলে ‘প্রায় তিন লাখ টাকার গাছ আত্মসাৎ করেছেন’ বলেও অভিযোগ ওঠে।

তদন্ত করে এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন ইদিলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন।

এ ব্যাপারে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সরকারি বিধি মোতাবেক ওই কর্মকর্তা নিজে বাদি হয়ে আলাউদ্দিন সরদারের বিরুদ্ধে গোসাইরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের গোসাইরহাট থানার ওসি মো. সেলিম রেজা বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অভিযোগটি এখনও এজাহারভূক্ত হয়নি।”

অন্যদিকে অভিযোগ দাখিলের পর ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারি সম্পত্তি থেকে গাছ কাটা ও মাছ চুরি করা ‘গ্রহণযোগ্য অপরাধ’ উল্লেখ করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমানের ভাষ্য, “ওসি এই অভিযোগে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারে।”

স্থানীয় আতিকুর রহমান ও আজাহার উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরদারের মেয়ে ‘জামাই পুলিশের একজন কর্মকর্তা’, বিধায় এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে গোসাইর থানার ওসি কালক্ষেপণ করছেন।”

বেদখল জমি উদ্ধারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হোসেন।

তবে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, “গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিষয়ে আমার নিকট কাগজপত্র প্রেরণ করলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

স্থানীয়রা বলছে, বর্তমানে ওই জমির প্রতি শতাংশের দাম সাত লাখ টাকা, সেই হিসেবে ওই বেদখল সরকারি সম্পত্তির মূল্য প্রায় সাত কোটি টাকা।