বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা: প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2019, 01:06 PM
Updated : 7 Oct 2019, 05:51 PM

সোমবার বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের সামনে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সাঈদ ফেরদৌস বলেন, “দেশে গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বলেন, পাড়ায়-মহল্লায় বলেন আর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বলেন, অপারাধীরা অপরাধ করে নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যায়।

“এ জন্যই আবরার হত্যার ঘটনা ঘটে। যত দিন না আমরা সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারব, তত দিন এ ধরনের অন্যায় চলতে থাকবে। দেশ ক্রমে ক্রমে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে আপন সন্তানকে যদি মেরে ফেলা হয়, বাবা প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। আমি এর বিরুদ্ধে আগামী প্রজন্মকে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাহস নিয়ে দাঁড়াতে বলব।”

জাহঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, “লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা এমন এক স্বাধীনতা আমরা পেলাম যেখানে মুক্তচিন্তার কোনো দাম নেই। আজ শিবির বলে সন্দেহ হওয়ায় আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার প্রশ্ন এই অধিকার তাদের কে দিয়েছে?”

মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, “নতজানু পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে ভারতকে খুশি রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকবার যে প্রয়াস, তার সমালোচনা করেছিল বুয়েটে আমাদের বন্ধু আবরার। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার এই অধিকার রয়েছে।

“কিন্তু ছাত্রলীগ নামধারী রাষ্ট্রের পোষা সন্ত্রাসীরা তাকে এজন্য ডেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ন্যক্কারজনকভাবে হত্যা করার পর তাকে শিবির হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।”

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী কাব্য কৃত্তিকা বলেন, “একজন মানুষকে তার আদর্শিক পরিচয়ের কারণে মেরে ফেলা যায় না। সে যদি শিবির করে আর শিবির করা যদি ঘৃণ্য হয় তাহলে দেশে আইন আছে। আইন তার বিচার করবে। একজন মানুষ সে যেকোনো আদর্শেরই হোক না কেন, নাস্তিক বা শিবির বলে তাকে হত্যা করা জায়েজ হতে পারে না।”

মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

রোববার রাত ২টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলেরে সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই হলের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, আবরারকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডেকে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে শিক্ষার্থীরা রাত ২টার দিকে হলের দ্বিতীয়তলার সিঁড়িতে তার লাশ পায়।

আবরারকে শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে সহপাঠীদের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। পুলিশ ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতাকে আটক করেছে।