ঢোল আদলে দুর্গার মণ্ডপে ভিড়

সারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর জিউর আখড়া মন্দিরে ঢোল আকৃতি দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2019, 06:31 AM
Updated : 7 Oct 2019, 06:56 AM

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আয়োজনকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে প্রতি বছরই নতুন নতুন আঙ্গিকে তারা পূজামণ্ডপ গড়ে বলে জানায় পূজা কর্তৃপক্ষ।

ষষ্ঠি পূজার দিন শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ভীড় করছে এ মণ্ডপে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবছরই এই মণ্ডপ দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয় উল্লেখ করে শুভ্রা মজুমদার নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “এবার ঢোলের আদলে সাজানো হয়েছে, তাই পূজা দিতে এই মণ্ডপটিতে এসেছি “

মন্দিরটির সহ-সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, “জেলার সেরা পূজা মণ্ডপটি তৈরি করার জন্য প্রতি বছরই চেষ্টা করা হয়। যদিও এই প্রতিযোগিতায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।

“এতে কোনো পুরস্কারও নেই। তবুও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই এত সব আয়োজন।”

মণ্ডপের মূল ফটকে রয়েছে বিশাল লম্বাকৃতির একটি গিটার ও দুইটি ঢোল। বড় একটি ঢোল, মাঝারি দুইটি ও ছোট ১৩টি ঢোলের আদলে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপটি।  পুরো মণ্ডপ জুড়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, তিন অবতারের আবির্ভাবকাল ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।

রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা বলা হয় অকাল বোধন।

পুরোহিতরা বলছেন, দুর্গা দেবীর প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্ত কাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা হয় তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। তবে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে শারদীয় পূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব।

শাস্ত্র বলছে, এবার সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন শনিবার এবং ফেরার দিন মঙ্গল হওয়ায় দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চেপে, একই বাহনে তিনি ফিরবেন।

দুর্গার ঘোড়ায় চড়ে এলে বা গেলে তার ফল হয়-‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। অর্থাৎ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর শঙ্কা।

এই পূজা উপলক্ষে শনিবার মহাসপ্তমীর পূজা, রোববার মহাঅষ্টমী পূজা হয়েছে। সোমবার সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে হয় মহানবমী পূজা।

আর মঙ্গল সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

দর্শনার্থীদের কাছে আনন্দদায়ক করতে ‘প্রতিদিনই কনসার্টের’ আয়োজন করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও আবৃত্তি ও কুইজ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বিজয়ীদের তাৎক্ষণিকভাবে পুরস্কৃতও করা হচ্ছে বলে জানায় পূজা কর্তৃপক্ষ।

নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, তাদের মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি হিন্দু ধর্মবলম্বীদের মধ্য থেকে ৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।

“তারা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন।”

যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ছোট-বড় ৭৮টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। এই উৎসবকে ঘিরে মণ্ডপগুলোতে রয়েছে হিন্দ সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড।