গাছে গাছে হাঁড়ির বাসা, পাখির জন্য দরকার বন

পাখির নিরাপদ ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করতে ময়মনসিংহে গাছে গাছে হাঁড়ি ঝোলাচ্ছে একদল পাখি প্রেমিক। তবে এটা বিপন্ন পাখিদের তেমন কাজে দেবে না বলছেন বার্ড ক্লাবের কর্ণধার।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2019, 06:22 AM
Updated : 5 Oct 2019, 06:41 AM

‘পাখি বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও’ স্লোগান দিয়ে ‘অভুদ্যয়’ নামের স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেলার ভালুকা উপজেলা জুড়ে গাছে গাছে পাখির আবাসন গড়তে মাটির হাঁড়ি বাঁধছে। এরই মধ্যে আট হাজার এমন বাসা গড়েছেন তারা।

অভ্যুদয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক মোকছেদুর রহমান মামুন বলেন, “সত্যি কথা বলতে উঁচু উঁচু গাছে উঠে মাটির হাঁড়ি বাঁধা অনেক কঠিন ও ঝুকিপূর্ণ কাজ। তারপরও আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাগ ভাগ করে দায়িত্ব পালন করে কাজটি বাস্তবায়ন করছি।

স্বেচ্ছাসেবীরা অত্যন্ত আনন্দের সাথেই কাজটি করছে উল্লেখ করে সংগঠনটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, পাখির জন্য কিছু করতে পেরে নিজেদেরও খুব গর্ব হচ্ছে।

পরিবেশের জন্য পাখির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুনায়েত হোসেন রিপেল জানান, তাদের এই কাজের মূল উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল।

গাছে হাঁড়ি বাঁধার এই কর্মসূচি গত ৪ অগাস্ট উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।

তিনিও জানান, পাখির বংশ বিস্তার বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখি বাঁচাতে মাসুদ কামালের আহ্বানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অভুদ্যয়ের সদস্যরা।

“উপজেলার একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নে ৪০ দিনে আট হাজার পাখির নিরাপদ আবাসন স্থাপন কার্যক্রম সম্পূর্ণ করেছেন তারা।”

পর্যায়ক্রমে উপজেলার বাকি আরও সাতটি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম পরিচালনার সংকল্পের কথা জানান তিনি।

দিন দিন বন-জঙ্গল মারাত্মকভাবে উজাড় হওয়ায় দেশ পাখি শূন্য হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে পাখির বংশ বিস্তার, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ থেকে এই উদ্যোগ বলে জানালেন ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল।

“তাই গোটা উপজেলার জঙ্গলে-জঙ্গলে ও নির্জন স্থানে পাখির নিরাপদ আবাস স্থাপনের পরিকল্পনা করি। ”

তাদের আশা-গাছে পাখির এই হাঁড়ির বাসা বাঁধায় আগামী বছর ভালুকায় ‘শালিক, টিয়া, চড়ুই ও ঘুঘু’র সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

ডিম পাড়ার মৌসুমের আগে এই উদ্যোগ শেষ করার লক্ষ্যর কথা উল্লেখ করে মাসুদ কামাল বলেন, “তাই শীতের পূর্বেই পাখি সংরক্ষণের জন্য বাসা তৈরি করা হচ্ছে।”

তবে ‘শীতকালে কিছু প্যাঁচা বাচ্চা দেয়’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, “পাখির প্রজনন মৌসুম হচ্ছে বসন্ত থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত।”

পাখি প্রেমিক ইনাম আল হক আরও জানান, হাঁড়িতে বিশেষ করে সাধারণ শালিক বাসা বাঁধে।

“বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ শালিক পাখি রয়েছে। আমাদের চিন্তার বিষয় হলো অন্য পাখিদের নিয়ে,”বলেন তিনি।

“বাংলাদেশে ৫০ জাতের পাখি লক্ষ্য করা গেলেও ৬০০ জাতের পাখি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে।”

তবে ‘গাছে হাঁড়ি বেঁধে পাখির প্রজনন বৃদ্ধি করা মানুষের জন্য বড় কিছু হলেও পাখি রক্ষায় সেটি যথেষ্ট নয়’ বললেও ভালুকার স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশংসা করে পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম বলেন, “ভালুকার অভুদ্যয় নিজেদের পয়সা খরচ করে গাছে গাছে হাঁড়ি বেঁধে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি আসলেই ধন্যবাদ পাওয়ার মতো।

“তবুও তো আমরা পাখির জন্য কিছু করছি। সেটি সাধারণ মানুষ দেখছে এবং পাখি রক্ষায় সচেতন হচ্ছে।”

পাখির বংশ বৃদ্ধির জন্য জলাভূমি রক্ষার পাশাপাশি বনভূমি সংরক্ষণ করার ব্যাপারে জন সচেতনতা গড়ার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ময়মনসিংহ বিভাগে ৭২ হাজার একর বন রয়েছে উল্লেখ করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিন্তু দিন দিন বড় বড় গাছের সংখ্যা কমে আসছে। তাই পাখিরা নিরাপদে বাসা বাঁধতে পারছে না। যার ফলে তাদেরও প্রজনন কমছে।”

গাছের ডালে ডালে মাটির হাঁড়ি বেঁধে পাখির বাসা বানানো এই উদ্যোগে উপজেলার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বেশ খুশি।

ময়মনসিংহে ১০-১৫ জাতের পাখি রয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় এক পাখি প্রেমিক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য এএইচএম মোতালেব বলেন, “এর মধ্যে বেশি দেখা যায়-শঙ্খচিল, শালিক, টিয়া, চড়ুই, ঘুঘু ও কাক।

“তবে ঈগল এবং শকুন নেই বললেই চলে।”