এরশাদের আসনে নিরুত্তাপ ভোট

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের আসন রংপুর-৩ এ উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2019, 03:18 AM
Updated : 5 Oct 2019, 11:17 AM

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভোটের প্রতি মানুষের অনাগ্রহের মধ্যে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।

প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোটারের এই আসনে পুরো ভোটগ্রহণ হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম); ফলে ফলাফল দ্রুত আসবে বলে আশা করছেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন।

গোলযোগহীনভাবে ভোটগ্রহণ হলেও প্রশাসনের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ ভোট নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

লাঙল ও ধানের শীষের প্রার্থী বাদে এই উপনির্বাচনে প্রার্থী হন স্বতন্ত্র মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (মোটরগাড়ি), এনপিপির শফিউল আলম (আম), খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল (দেওয়াল ঘড়ি) এবং গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ বায়েজীদ (মাছ)।

সাদ ও রিটা এই আসনে ভোটার না হওয়ায় তারা ভোট দিতে পারেননি।

গত ১৪ জুলাই বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন ১ সেপ্টেম্বর আসনটিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে।

রংপুর সেনানিবাস, রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সবগুলো নিয়ে এই আসনটিতে এবারও কেন্দ্র ছিল ১৭৫টি।

মোট ১৭৫টি কেন্দ্রের এক হাজার ২৩টি গোপনকক্ষে চার লাখ ৪১ হাজার ২২৪ জন ভোটারের ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়, যাদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২০ হাজার ৮২৩ এবং নারী ২ লাখ ২০ হাজার ৪০১জন।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে ১৭৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, এক হাজার ২৩ এবং দুই হাজার ৪৬ জন পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরও বিভিন্ন কেন্দ্র দেখা যায় ভোটারশূন্য; অলস সময় কাটাতে দেখা যায় পোলিং এজেন্টদের।

রিটা রহমানের অভিযোগ, ভোটে সবার সমান সুযোগ ছিল না

এর মধ্যেই রংপুর নগরীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন ধানের শীষের প্রার্থী রিটা।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল রাতে সদর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে প্রশাসন। ভোটের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিয়ে গেছে। ভোরবেলা আবার আমরা সেগুলো পাঠিয়েছি।”

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রিটা বলেন, “আমরা দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি দল। আমরা বারবার অনুরোধ করেছিলাম যে ভোটের মাঠ সুষ্ঠু রাখেন, নিরপেক্ষ আচরণ করেন। কিন্তু তারা পক্ষপাতিত্ব করছেন। ভোটের মাঠ সবার জন্য সমান করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ।”

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বিএনপির প্রার্থী বলেন, “নির্বাচন ও ইভিএম নিয়ে মানুষ আশাহত, তাই এই নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততা নেই। মানুষ ভোট দিতে আসছেন না।”

‘স্বাভাবিক পরিবেশ’ থাকলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলেন বলেও জানান রিটা।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু প্রমুখ।

সকালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এরশাদপুত্র সাদ সাংবাদিকদের বলেন, জয়ের বিষয়ে তিনি ‘শতভাগ আশাবাদী’।

সকালে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ এরশাদ

“নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতিও বাড়ছে। আমার বাবার মতো আমার সাথেও রংপুরের সাধারণ জনগণ আছে, সেহেতু আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।”

বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমানের অভিযোগ ‘মিথ্যা’ দাবি করে সাদ এরশাদ বলেন, “অন্য প্রার্থীরা তাদের পরাজয় বুঝতে পেয়ে নির্বাচন নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।”

নানা নাটকীয়তার পর এরশাদপুত্র সাদ এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হন। এরশাদের ভাতিজা  সাবেক সংসদ সদস্য আসিফ জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

বরাবর এই আসনে এরশাদ জয়ী হয়ে এলেও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় লাঙলের এবারের প্রার্থী সাদ এরশাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চিলমন এলাকার ব্যবসায়ী অহেদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন থাকি লাঙলে ভোট দিয়ে আসছি, তেমন উন্নয়ন তো পাই নাই। আর আজ যে নির্বাচন, কোনো প্রার্থী তো ভোট চাইল না। আমাদের জাগার ছেলেকে ভোট দিব।”

তামপাট এলাকার রিকশাচালক মমিন বলেন, “হামার কাছত তো কেউ ভোট চায় নাই। বাবা হামরা কাকে ভোট দিমো। ওমাক তো চিনিয়ে না।”

সদ্যপুস্কুনি ইউনিয়নের দিনমজুর রফেত আলী বলেন, “হামরা কি ওমার কাছত মাথা বেছে দিছি ওমাক ভোট দেওয়া নাগবে। বাহে, হামার ভোট হামার মনমত দিছি।”

রংপুর উপনির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাহতাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর ভোটের সব ব্যবস্থা ছিল, কোনো গোলযোগ হয়নি।

“ইভিএমে ভোট হওয়ায় স্বল্প সময়ে ফলাফল ঘোষণাও সম্ভব হবে।”

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

এবার আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর উপনির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের আশাও কমে যায়।

দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বিরোধিতার মধ্যেই নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু ১৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে বলেন, দলের স্বার্থে নিজেকে ‘বিসর্জন’ দিলেন তিনি।