জুলাই-সেপ্টেম্বর এই ইলিশ মৌসুমে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয় উল্লেখ করে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, “এ সময় অনেক মাছ বিভিন্ন কারণে নরম হয়ে যায়।”
এসব নরম ইলিশ মাছগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করা হয় বলে জানান তিনি।
শীতকালে চাঁদপুর, ঢাকা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, পাবনা, কিশোরগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গে লোনা ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে এই মাছ ব্যবসায়ী জানান, আর চাহিদা থাকায় এ ইলিশ বিক্রি করে বেশ লাভবানও হচ্ছেন তারা।
‘শীতে প্রকারভেদে ৪শ’ থেকে ৭শ’ টাকায় লোনা ইলিশ বিক্রি করা হয়।’
প্রথমেই ইলিশের পেট থেকে ডিম আলাদা করে ফেলা হয়, এরপর মাছ ফালি ফালি করে কাটা হয়।
কাটা মাছে ভালোভাবে লবণ দিয়ে স্তুপ আকারে ৬/৭ দিন রাখা হয়। এরপর সেগুলো লবণমিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
এভাবে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাকৃত ইলিশ এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় বলে জানালেন এ কাজে যুক্তরা।
বড়স্টেশন মাছঘাটে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ থেকে আসা জালাল হোসেন, নরুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, আদম আলী, মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, চাঁদপুর মাছঘাট এলাকায় লবণ ইলিশের ব্যবসায় ৫৫/৬০ জন জড়িত। ইলিশের মৌসুমে তারা ‘নরম ইলিশ’ কিনে তাতে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন।
‘নরম ইলিশ মণপ্রতি ১০/১২ হাজার টাকায়’ কেনেন তারা।
পরে শীত মৌসুমে যখন নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না, তখন তারা উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন।
জালাল হোসেন বলেন, আমদানিকৃত ইলিশ মাছ অনেক সময় নদীতে জেলেদের নৌকায় বেশ কয়েকদিন সংরক্ষণ করা হয়। বরফ ও স্তুপের নিচে চাপে পড়ে কিছু মাছ নরম হয়ে যায়। এছাড়া পরিবহনের সময়ও কিছু মাছ নরম হয়ে যায়। এসব ইলিশ ব্যবসায়ীরা অল্প দামে কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন।
“১২শ থেকে ১৩শ টাকা কেজি দরে ইলিশের ডিম বিক্রি হয়। যা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টসহ ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করা হয়ে থাকে।”
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, লবণ দিয়ে ইলিশ সংরক্ষণ করা একটি স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি। এতে করে মাছ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
“শীতে যখন দেশে ইলিশ পাওয়া যায় না, তখন গ্রামাঞ্চলে এই লোনা ইলিশ বিক্রি হয়। ফলে মানুষ সারা বছরই ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে।”
চাহিদা ভালো থাকায় চাঁদপুরে লোনা ইলিশের শিল্প গড়ে উঠছে বলে জানান তিনি।