জুমক্ষেত থেকে ফসল তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে পাহাড়ি কিষাণ-কিষাণি।
সমতলের ধান চাষের থেকে জুমক্ষেতে চাষ পদ্ধতি আলাদা। পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে জুম পদ্ধতিতে চাষের জন্য জঙ্গল কেটে আগুন পোড়ানো হয়।
তারপর সেখানে কিছু দূরে দূরে ছোট ছোট গর্ত করে ধানসহ নানান সবজির বীজ একসাথে পুতে দেওয়া হয়।
শরতের ভাদ্র-আশ্বিন মাসে পেকে ওঠায় এখন জুমধান কাটার মৌসুম।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় খাদ্যের প্রধান উৎস জুম চাষ ‘খাদ্য নিরাপত্তায় এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. এ কে এম নাজমুল হক বলেন, এ বছর দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি ছিল না। জুমধানের শীষ বের হওয়ার সময়ও বৃষ্টি কম ছিল।
“এ কারণে জুমের ধান ভাল হয়েছে।”
এ বছর ৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ হয়েছে বলে জানান তিনি।
ধান কাটছে জুমচাষিরা। পাশাপাশি ছোট ছোট গাছ এবং বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি মাংচাং ঘরে ধান মাড়াইয়ের কাজও চলছে পুরোদমে।
উদয়াস্ত পরিশ্রমের পর ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকেরা। চিম্বুক পাহাড়ে রামরি পাড়ার জুমক্ষেতে কথা হয় মেলকন ম্রো এবং থংপ্রে ম্রোদের সাথে। দুজনেই চার আড়ি (এক আড়ি = ১০ কেজি) করে ধান লাগিয়েছেন এবার।
“তবে চারা বেড়ে ওঠার সময় বৃষ্টি কম থাকায় ধান পেকেছে দেরিতে” বলেন মেলকন।
পাশের এক বড় জুমে দেখা মেলে ধান কাটায় ব্যস্ত আরও একদল ম্রো নারী-পুরুষের। মুখের শব্দেই বোঝা যায়-ফসল ভালো হওয়ায় তারাও খুশি।
এরা সবাই ম্রো সমাজের একান্নবর্তী পরিবারে সদস্য হওয়ায় শ্রম দেওয়ার মানুষ তাদের বেশি।
তারা জানায়, ‘প্রায় দশ একর জায়গায়’ জুমচাষ করেছেন তারা।
‘বছর খোরাকি ধান পাবে’ আশা করছেন তিনি।
চিম্বুক ছাড়াও রোয়াংছড়ি উপজেলা সড়ক ঘেঁষে হানসামা ও শামুকঝিরি পাড়ায় দেখা মেলে জুমক্ষেতের। সেখানেও পাহাড়ি নারী চাষিদের জুমক্ষেত থেকে পাকা ধান কেটে ঘরে ফিরতে দেখা যায়।
কখনও বৃষ্টি কম হওয়ায় আবার কখনও বেশি বাতাসে ধান নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে তারা জানায়, এবার ধান ভালো হয়েছে। ‘দানাও বেশ মোটা।’
চাষাবাদের পাশাপাশি জেলা সদর কাছে হওয়ায় বাজারে সবজি-ফসল বিক্রি করেও বেশ রোজগার হয় বলে জানান তারা।
এদিকে জুমের ফসল ঘরে তোলার সময় প্রতি বছর নবান্ন উৎসব করে থাকে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের পরিচালক মংনুচি মারমা বলেন, “পাহাড়ে ১১টি আদিবাসী সম্প্র্রদায়ের একেক বছর একেক জনগোষ্ঠীর রীতিনীতি নিয়ে নবান্ন উৎসব করা হয়।”
এবারও দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।