ফোনালাপ ফাঁস: রাবির উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযের আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ নিয়ে দরকষাকষির ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2019, 06:02 PM
Updated : 2 Oct 2019, 06:02 PM

এ দাবিতে ক্যাম্পাসে বুধবার দুপুরে পদযাত্রা করে বিশ্বদ্যিালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট; আর সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।

সোমবার আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রার্থী নুরুল হুদার স্ত্রী একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তুজ সাদিয়ার সঙ্গে চৌধুরী মো. জাকারিয়ার ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস হয়।

চৌধুরী জাকারিয়া ফোনালাপের কথা স্বীকার করলেও ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি এডিট করা বলে দাবি করছেন।

ক্যাম্পাসে সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবন থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টুকিটাকি চত্বরে এসে তারা সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান বলেন, “সারাদেশ আজ দুর্নীতিতে ভরে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তারই নজির দেখতে পাই। যার মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বৈরতান্ত্রিক, পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করাসহ মেধার মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার, ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক শাকিল হোসেন।

সমাবেশে অবিলম্বে ‘জয় হিন্দ’ শব্দ উচ্চারণ করা উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকা উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা।

কয়েকদিন আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপাচার্য তার বক্তব্য শেষে জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলার পর ‘জয় হিন্দ’ শ্লোগান দেন। পরে সমালোচনার মুখে তিনি গণমাধ্যমে এর ব্যাখ্যাও দেন।   

এদিকে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মশাল মিছিলে উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সংগঠন।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষে বুদ্ধিজীবী চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়।

এতে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফেডারেশন, রাকসু আন্দোলন মঞ্চ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মুরশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রাশেদ রিমন বলেন, “উপ-উপাচার্যের ফোনালাপের ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাকে উপ-উপাচার্য হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে। তাকে স্বপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।”

সমাবেশ রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, “উপ-উপাচার্যের অডিওর বিষয়ে উপাচার্যকে বলেছিলাম। এ বিষয়ে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কবে এ কমিটি গঠন করা হবে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানাননি। ওই অডিওর ঘটনায় উপ-উপাচার্যকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি আর্থিক লেনদেনে জড়িত নন। তিনি জড়িত না হলে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

অন্তর বলেন, “প্রশাসন তাদের তদন্ত চালিয়ে যাক। আমরাও আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা এর সুষ্ঠু বিচারের জন্য লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. সাইফুল ইসলাম ফারুকী বলেন, “আমি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আজকে বসতে চেয়েছিলাম আমরা। তবে সাধারণ সম্পাদক বসতে আপত্তি করেন। ফলে বসা হয়নি। আর তাই এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া যাচ্ছে না।”

গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগে চাকরিপ্রার্থী নুরুল হুদার স্ত্রী আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তুজ সাদিয়ার সঙ্গে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস হয়। নুরুল হুদা একই বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে অনার্সে ৩.৬৫ ও মাস্টার্সে ৩.৬০ পাওয়া শিক্ষার্থী। তিনি ভালো ফলাফল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণ পদক ও প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণ পদক পান।

এ ঘটনায় পরদিন সমালোচনার মুখে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠান অধ্যাপক জাকারিয়া। সেখানে তিনি দাবি করেন, ফোনালাপটি এডিট করে প্রকাশ করা হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ বিষয়ে নুরুল হুদা বা তার স্ত্রী সাদিয়া এখনও কথা বলতে রাজি হননি।

তবে ওই বিবৃতিতে উপ-উপাচার্য দাবি করেন, স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে নুরুল হুদার অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে তার স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন তিনি।