প্লট বরাদ্দে সাবেক আরডিএ চেয়ারমানের ‘দুর্নীতি’

জালিয়াতি করে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2019, 04:18 PM
Updated : 2 Oct 2019, 04:18 PM

সংস্থাটির সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে বুধবার মামলাটি দায়ের করেন একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল আমিন।

দুদকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৪ বছর আগের ওই দুর্নীতির তদন্ত করেন চারজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। তদন্ত শেষে গত সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।

মামলায় অপর আসামিরা হলেন আরডিএ-এর সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাবরক্ষক রুস্তম আলী, উচ্চমান সহকারী মোস্তাক আহমেদ, ছয় প্লট গ্রহীতা এনামুল হক, আবু রায়হান শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. এসএম খোদেজা নাহার বেগম, ডা. রবিউল ইসলাম স্বপন, মাহফুজুল হক ও খায়রুল আলম।

আরেক প্লট গ্রহীতা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম আকন্দ ২০১৮ সালে মারা যাওয়ায় তার নাম আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

মামলার বাদী ও সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, প্লটের সাত ক্রেতা আরডিএ-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে প্লটগুলো বরাদ্দ নিয়ে তারাও অপরাধ করেছেন। আর অনৈতিক সুবিধা এবং নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আরডিএ-এর কর্মকর্তারাও অপরাধ করেছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ৫ দশমিক ৯০ থেকে ৮ দশমিক ২৩ কাঠার আটটি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দে ২০০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তৎকালীন চেয়ারম্যান এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রতি কাঠা জমির মূল্য ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ওই আটটি প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়।

পরে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে আরডিএ-এর পরবর্তী চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার প্লটগুলোর বাজার দর পুনঃনির্ধারণ না করেই দুবছর আগের মূল্যেই দরপত্র আহ্বানের কার্যক্রম শুরু করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, এর ধারাবাহিকতায় স্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক ‘দৈনিক নতুন প্রভাত’ নামের স্থানীয় একটি পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য ২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর চিঠি পাঠানো হয় বলে দেখান। আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি ছাপানো হয়েছে দেখানো হয় ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি আদৌ ছাপা হয়নি।

আবার কমপক্ষে একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার বিধান থাকলেও তারা শুধু স্থানীয় একটি পত্রিকায় ভুয়া বিজ্ঞাপন ছাপানো হয় দেখিয়ে দরপত্রের কার্যক্রম শুরু করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

মামলায় বলা হয়, নতুন প্রভাত কর্তৃপক্ষ দুদককে জানিয়েছে-তারা বিজ্ঞাপন ছাপায়নি এবং কোনো বিলও গ্রহণ করেনি। প্রমাণ হিসেবে ওই তারিখের পত্রিকার একটি পূর্ণাঙ্গ কপি দুদককে সরবরাহ করা হয়। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে প্লট বরাদ্দ করতে জালিয়াতি করে অফিসের রেকর্ডপত্র ঠিক রাখা হয়।

দুদক বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলে, তৎকালীন আরডিএ চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার অন্যদের সঙ্গে যোগসাজস করে উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়াকে গোপন করেন। ফলে আগে থেকেই নির্ধারিত শুধু সাতজন ব্যক্তি আটটি প্লটের জন্য আবেদন করেন। এরপর আটটি দরপত্র যাচাই বাছাই করে দরপত্র ওপেনিং কমিটির সদস্য এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাবরক্ষক রুস্তম আলী ও তখনকার নিম্নমান সহকারী মোস্তাক আহমেদ ২০০৬ সালের ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় উপস্থাপন দেখান। আর আরডিএ চেয়ারম্যান তা অনুমোদন করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদিন দরদাতাদের অনুকূলে অবৈধভাবে বরাদ্দপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্তও দেন চেয়ারম্যান। অথচ ওই তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি তোলাই হয়নি। সেদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন তখনকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মুনির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক সচিব কোরবান আলী ও রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ।

উপস্থিত ওই কর্মকর্তারা দুদককে বলেন, আটটি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত কোনো এজেন্ডা ওই সভায় ছিল না এবং এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। তারপরও প্লট বরাদ্দের বিষয়টি জানতে পেরে তখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ২০০৬ সালের ৩ মার্চ জেলা প্রশাসককে লিখিত প্রতিবেদন দেন।

এরপর দুদক ওই প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি সংগ্রহ করে অনুসন্ধান শুরু করে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দুদক প্রমাণ পায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৫০ দশমিক ৬৭ কাঠা জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে বলে দুদকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।