রাজশাহীর কলেজছাত্রী লিজার মৃত্যু তদন্তে ২ কমিটি

রাজশাহীতে থানা থেকে বের হয়ে গায়ে আগুন দেওয়া কলেজছাত্রী লিজা রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দুইটি কমিটি হয়েছে।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2019, 12:36 PM
Updated : 2 Oct 2019, 12:36 PM

একটি কমিটি মানিবাধিকার কমিশনের এবং অপরটি পুলিশের।

স্বামীর সঙ্গে কলহের জেরে শনিবার লিজা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। বুধবার  ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।

লিজা রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরিবারের কাছে গোপন রেখে গত ২০ জানুয়ারি রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র সমবয়সী সাখাওয়াত হোসেনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়েটি ছেলের পরিবার মেনে না নিলে তাদের সংসারে কলহ শুরু হয়।

রাজশাহী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দা নিলুফার ফেরদৌস বলেন, লিজা রহমান কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। সে কলেজেও অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে ঝামেলার কারণে তার এ অবস্থা হয়েছে। তাই লিজা স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থানায় গিয়েছিল। সেখানে এমনকি হলো থানা থেকে বের হয়েই গায়ে আগুন দিল।

এর সঙ্গে যদি কেউ জড়িত থাকে তার শাস্তির দাবি জানান এই শিক্ষিকা।  

মানবাধিকার কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি আহবায়ক আল মাহমুদ ফাইজুল কবীর বলেন, “বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটি করে আমাদের রাজশাহী পাঠিয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলছি। জানার চেষ্টা করছি থানা থেকে বের হয়েই কেন মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা চালাল। তদন্ত শেষে আমরা কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দেব।”

মানবাধিকার কমিশনের পাশাপাশি এ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে নগর পুলিশও। এতে পুলিশের কোন গাফিলতে পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন রাজশাহী নগর পুলিশ প্রধান হুমায়ূন কবির।

তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে লিজার সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচারণ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বুধবার তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্তে লিজাকে অসহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় এখনও মামলা দায়ের করা হয়নি জানিয়ে হুমায়ূন কবির বলেন, লিজার পরিবারের সদস্যদের মামলা করতে ডাকা হয়েছে। তারা যদি মামলা না করে তবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। আর তদন্ত যদি লিজার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যদের আত্মহত্যার প্ররচনার প্রমাণ মিলে তবে তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সালমা বেগম বলেন, তিন কার্যদিবসের মধ্যে দতন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বুধবার তার শেষ দিন। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে তদন্তে কী ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে তা জানাতে অস্বীকার করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শাহমখদুম থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, লিজার অভিযোগ শোনা হয়েছিল। তার অভিযোগ মামলা আকারে রেকর্ডের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে হঠাৎ করেই থানা থেকে বের হয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। কী কারণে লিজা এতটা মানসিক যন্ত্রণায় ছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় এক চা বিক্রেতা জানান, থানা থেকে বের হয়ে লিজা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। মুহূর্তেই লিজার শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন গিয়ে আগুন নিভিয়ে একটি অটোরিকশা করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে সময় সেখানে পুলিশও ছিল।

লিজা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আবদুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। লিজা রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। নগরীর পবাপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন তিনি। তার স্বামী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সাখাওয়াৎ হোসেন (২০)।

পরিবারকে না জানিয়েই সাখাওয়াৎ লিজাকে তার গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করেন। সাখাওয়াতও রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন।