সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনের মুখে সোমবার উপাচার্য অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা থেকে তারা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে নেচে গেয়ে রং মেখে উল্লাস শুরু করেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসির পদত্যাগের খবর পেয়ে তারা ক্যাম্পাসে আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। তাদের আনন্দ উল্লাস চলতে থাকবে। তাদের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এসে পৌঁছায়নি। এটা এসে পৌঁছালেই তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবেন।
“বিএনপিপন্থি এ ভিসি পদত্যাগ করায় বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমি কলংকমুক্ত হয়েছে। আমরা একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দেখতে চাই।”
শিক্ষার্থী সুমি ইসলাম বলেন, “আমরা টর্চারিং সেল থেকে মুক্তি পেলাম। আমাদের অভিভাবকরা অপমানের হাত থেকে রক্ষা পেল। তার আচার আচরণ ভিসি সুলভ ছিল না। মুখের ভাষা ছিল বস্তির মানুষের মতো। আমরা এমন ভিসি আর চাই না।”
গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফেসবুকে ব্যক্তিগত পেজে শেয়ার দেওয়ার অভিযোগকে সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে জিনিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও তাকে বহিষ্কারের ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।
দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নিতে বাধ্য হয়।
এরপর উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, নারী কেলেংকারিসহ নানা অভিযোগে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসি পতনের আন্দোলন শুরু করেন।
এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের লোকজন আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালালে আন্দোলন আরও প্রচণ্ড হয়ে ওঠে।
গতকাল রোববার তদন্ত কমিটি ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এ প্রতিবেদনে ভিসিকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে ভিসির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের সত্যতা পওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
রোববার রাত ৯টায় অসুস্থতার কথা বলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বাংলো থেকে পুলিশ পাহারায় বের হয়ে যান। ভিসি হিসেবে সোমবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভায় যোগ দেন। সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগ করেন।
ময়মসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনলজি অ্যান্ড জেনেটেক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
প্রথম মেয়াদের চার বছর সম্পন্ন হলে ২য় মেয়াদে ফের ভিসি পদে নিয়োগ পেয়ে নাসিরউদ্দিন ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন। ভিসির পাশাপাশি তিনি কম্পিউটার সইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু ইনস্টিউিট অব লিবারেশন ওয়ারের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।