সরজমিনে দেখা যায়-শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার উত্তর কেদারপুর ও বুন্না গ্রামে পদ্মার ডানতীর রক্ষা বাঁধের ব্যাপক ভাঙন ঘটেছে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেককে ঘর সরিয়ে নিতেও দেখা যায়।
ভাঙন রোধে নদীতে জিওব্যাগ ফেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি বেঙ্গল গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক মেজর (অব.) মৃধা রেজাউল করিম জানান, গত শুক্র-শনিবারে বাঁধের ‘৪০০ মিটার’ ভেঙে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে শুরু হওয়া পদ্মার ভাঙনে ২০/২৫টি ঘরবাড়ি, মসজিদ ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কথা জানিয়েছে এলাকাবাসী। আরও ভাঙনের আতঙ্কে শতাধিক বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার কথাও জানান তারা।
এই নদীর ভাঙন নিয়ে বিভিন্ন জনের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হওয়ায় আকস্মিকভাবে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
“আমারা ডাম্পিং করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি।”
নৌ-বাহিনীর খুলনা শিপইয়ার্ডের জেনারেল ম্যানেজার শহীদুল্লাহ আল ফারুক মনে করেন, “নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করে ভাঙন হতে পারে বলে আমাদের ধারণা।
“ভাঙনের পরে আমরা জিওব্যাগ ও আরসি ব্লক ডাম্পিং এর কাজ শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি ভাঙন রোধ করা যায়।”
আর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী ভাবছে ভাঙনের কারণ অন্য।
নিদিষ্ট জায়গায় নদী ড্রেজিং না করায় তীব্র স্রোতে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে আতাউর রহমান, মিজানুর রহমানসহ এলাকার আরও অনেক বাসিন্দা।
এই ভাঙন শুরু পর শনিবার পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, নৌবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামূল হক শামীম জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধায়নে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭/৮ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে ‘আমাদের টার্গেট ২৮ লাখ জিওব্যাগ ডাম্পিং অতিক্রম করে ৩৩ লাখ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি।’
‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের’ কারণে নুতন করে এ ভাঙন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “খবর পেয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়ার পর সবাই চলে আসে। আমরা সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে ভাঙন রোধে কাজ করে যাচ্ছি।
“ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিবেলার খাবার আমরা দিয়ে যাচ্ছি।”
এ দিন মুলফৎগঞ্জ মাদরাসায় নদী ভাঙন রোধে মুনাজাতে অংশ নেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামূল হক শামীম। এরপর উপমন্ত্রী কেদারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ জনকে ৩০ কেজি করে চাল, ১২ জনকে সাড়ে সাত হাজার করে টাকা ও ২৪ জনকে পাঁচ হাজার করে নগদ টাকা বিতরণ করেন।
এ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার রমিজ বেপারী, তারা বেপারী, হাজি মনির হোসেন,জামাল বেপারী, বাবু বেপারী নজরুল মেম্বার, বাদল, রাজন বেপারী, সুমন ঢালি, আজিজ মোল্যা, বুদ্ধি মোল্যা, মাহবুবুর রহমান, নুরু বেপারী, ইছব আলী বেপারী, দীল মোহাম্মদ, সিরাজ বেপারী, লিটন বেপারী, সাঈদ বেপারী, এনায়েত খলিফা, কাদের বংশ ও খাদিজা আকতার।
ক্ষত্রিগ্রস্ত এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নদী ড্রেজিং যে এলাকা দিয়ে করার কথা ছিল। সে স্থানে ড্রেজিং না করার কারণে তীব্র স্রোতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে তীরে আঘাত হানে।
এতে করে ডানতীর রক্ষা বাঁধ ধসে পড়ে ভাঙন ঘটার বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে তারা।