উখিয়ায় প্রবাসীর বাড়িতে চারজনের গলা কাটা লাশ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় কুয়েত প্রবাসী এক ব্যক্তির বাড়িতে তার পরিবারের চারজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2019, 04:25 AM
Updated : 26 Sept 2019, 02:38 PM

বুধবার রাতের কোনো এক সময় রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্নাপালং গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে ঢুকে লাশ পায়। কে বা কারা কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।”

নিহতরা হলেন- দুবাই প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার মা সুখিবালা বড়ুয়া (৬৫), রোকেনের স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৬), তাদের ছেলে রবিন বড়ুয়া (২) এবং রোকেলের ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)। 

রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক তলা ওই বাড়ির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, তবে ভেতর থেকে ছাদে ওঠার একটি সিঁড়ি ছিল। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ছাদ হয়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোকেনদের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই রবিসন বড়ুয়ার ইঞ্জিন ওয়ার্কশপের দোকান আছে। মেজ ভাই দীপু বড়ুয়া এক সময় স্থানীয় কোটবাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তবে বছর দেড়েক ধরে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামে। সেজ ভাই শিপু বড়ুয়া কোটবাজারে একটি ফার্নিচারের দোকান চালান।

আর সবার ছোট রোকেন গত দশ বছর ধরে কুয়েতে থাকেন। মাস ছয়েক আগে দেশে এসে বেশ কিছুদিন থেকে গতমাসে আবার কুয়েতে ফিরে যান। পূর্বরত্নাপালংয়ে তার বাড়ির পাশেই আলাদা দুটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন তার দুই ভাই দীপু ও শিপু।

শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী মিনু বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, তার মেয়ে সনি মাঝে মধ্যেই রোকেনের বাড়িতে দাদীর সঙ্গে থাকত। বুধবার রাতেও সে ওই বাড়িতে ছিল।  

“মিলা সন্ধ্যার দিকে কোটবাজার স্টেশনে গিয়েছিল ঘরের বাজার করতে। সাড়ে ৭টার দিকে ও বাসায় চলে আসে। রাতে খেয়ে চারজন ঘুমিয়ে পড়েছিল বলেই আমরা জানি। আর কেউ ওই বাসায় থাকে না।”

সকালে ওই বাসায় কারও সাড়া না পেয়ে খোঁজ নিতে যান মিনু বড়ুয়ার বড় জা। দরজা ধাক্কানোর পর কেউ সাড়া না দেওয়ায় তিনি শাশুড়ির ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেন। শাশুড়িকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে তিনি চিৎকার দিলে রবিসন ছুটে যান।

পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে বাড়ির অন্য একটি দড়জা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং তিনটি ঘরে মেঝের ওপর চারজনের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ পায় বলে উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার জানান।

তিনি বলেন, “একটি ঘরে টিভি আর ফ্যান চালু অবস্থায় ছিল। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দা পাওয়া গেছে ঘরের ভেতরে। হত্যাকারী সম্ভবত বাসর ভেতরেই ছিল। রাতে খুন করে ছাদ হয়ে বেরিয়ে গেছে।”

ঢাকা থেকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা এসে আলামত সংগ্রহ করার পর লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে বলে পরিদর্শক মজুমদার জানান।

এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হতাকাণ্ড। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কী কারণে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্তের পরই নিশ্চিত করে বলা যাবে।”

রোকেন বড়ুয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা এলাকায় ‘শান্তপ্রিয় ভদ্র পরিবার’ হিসেবেই পরিচিত ছিল জানিয়ে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম বলেন, “ভাইদের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো ছিল। কারও সঙ্গে তাদের ঝগড়া বা জটিলতা ছিল বলে আমরা শুনিনি। এ ঘটনায় এলাকার লোকজনও হতবাক।”

সন্ধ্যার দিকে সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলটি চট্টগ্রাম থেকে এসে ঘটনাস্থল পরির্দশন করে। তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করার পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পুলিশ বাড়িটির তিনটি কক্ষ থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”