দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্রে ডিসি বাদ পড়ায় নারাজি

সরকারি তহবিলের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাত ও নয় কোটি টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার মামলার অভিযোগপত্রে জেলা প্রশাসকসহ তিন জনকে বাদ দেওয়ায় নারাজির আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 05:26 PM
Updated : 22 Sept 2019, 05:26 PM

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মো. ফেরদৌস রোববার এ নারাজির আবেদন করেন।

অভিযোগপত্রে বাদ পড়েছেন কিশোরগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর ও সাবেক অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মাইনুল হক।

জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সায়েদুর রহমান এই নারাজি আবেদন গ্রহণ করে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আগামী ৩০ অক্টোবর তারিখ ধার্য্য করেছেন।

এর আগে ঘটনার ২০ মাস পর চলতি বছরের ১০ জুলাই ৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা  অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ।

অভিযোগপত্রে আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম, সাবেক জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম, জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক সুপার মো. গোলাম হায়দার, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাময়িক বরখাস্ত অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাময়িক বরখাস্ত অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়া, সোনালী ব্যাংক লি.-এর সাবেক ম্যানেজার মো. মাহবুবুল ইসলাম খান, পূবালী ব্যাংক লি. এর কিশোরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোখলেছুর রহমান, মো. আমিনুল ইসলাম ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।

আদালতে রোববার উক্ত অভিযোগপত্র গ্রহণ উপলক্ষে শুনানির জন্য ধার্য ছিল।

গত বছরের ১৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডল বাদী হয়ে জেলার সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মো. সেতাফুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলায় ‘হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’ এর জন্য ২৭৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার সময় জালিয়াতির আশ্রয় নেন কিশোরগঞ্জের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম।

জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে চেকের মধ্যে সেতাফুল ইসলাম ৫ কোটি টাকা আত্মসাত করেন বলে অভিযোগে বলা হয়।

এছাড়া ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় থাকা আরও ৯ কোটি টাকার চেক থেকে টাকা উত্তোলন প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে আটকে যায়। মামলায় সেতাফুলের বিরুদ্ধে জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এ ঘটনায় গত বছরের ১৭ জানুয়ারি সেতাফুল ইসলামকে আটকের পর ২৯ জানুয়ারি জিজ্ঞসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর সেতাফুল ২ ফেব্রুয়ারি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে তিনি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম এবং জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়াসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তারাও জড়িত বলে জানান।

নারাজি প্রদানকারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মো. ফেরদৌস বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি যথাযথভাবে তদন্ত করেননি। তদন্তকারী কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত হয়ে মনগড়াভাবে মামলাটি তদন্ত করে গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দিয়েছেন।

“তাই আমি সুষ্ঠু কদন্তের মাধ্যমে উক্ত তিন আসামির অন্তর্ভুক্তির আবেদন জানিয়েছি।”

তবে এ ব্যাপারে ফোনে বারবার চেষ্টা করেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাদীপক্ষে নারাজি আবেদন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম নুরু। দুদকের পক্ষে ছিলেন পিপি আব্দুর রহমান।