গোবিন্দগঞ্জে ভূমি উদ্ধার আন্দোলন নেতাকে মারধর, সড়ক অবরোধ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির এক সদস্যকে মারধরের প্রতিবাদে তিনঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেছে সাঁওতালরা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 05:06 PM
Updated : 22 Sept 2019, 05:06 PM

রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই অবরোধ চলে।

এ সময় সড়কের দুপাশে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইউএনওর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর সাড়ে ১২টায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সদস্য আবদুল খালেক বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী বাগদা বাজারে যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৯টার দিকে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামারের কার্যালয় সংলগ্ন আম বাগান এলাকায় পৌঁছেন।

আবদুল খালেক বলেন, এ সময় রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামারের জমি পাহারায় নিয়োজিত কয়েকজন আনসার সদস্য তাকে আটকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

“সেখানে তারা খালেককে বেধরক মারধর করে। এতে খালেক মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান।”

এলাকাবাসী জানায়, এর প্রতিবাদে রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের সাহেবগঞ্জ বটতলা এলাকায় অবরোধ করে সাঁওতালরা। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ চলে। এ সময় সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্ট করেন। পরবর্তীতে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান ঘটনাস্থলে যান।

তারা এই ঘটনায় জড়িত আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সাঁওতালরা দুপুর সাড়ে ১২টায় অবরোধ তুলে নেয়।

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, “আমাদের সদস্য খালেক বাগদা বাজারে যাওয়ার পথে আনসার সদস্যরা পথরোধ করে তাকে মারধর করে। আনসার সদস্যরা অতি উৎসাহিত হয়ে মাঝেমধ্যে ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির লোকজনকে মারধর করছে।”

সংষদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “আহত আবদুল খালেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামারের আনসার সদস্যদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (পিসি) মো. জহুরুল ইসলাম মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, সকালে সাঁওতালদের কয়েকজন লোক চিনিকলের পুকুরে বর্শি দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। মাছ শিকারে তাদের বাধা দিলে তারা চলে যায়। পরবর্তীতে সাঁওতালরা আবার মাছ ধরতে আসে এবং আবদুল খালেক তাদের পাহারা দিতে থাকে।

“মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্যদের সঙ্গে খালেকের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে খালেক ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার সদস্য আতিকুর রহমান ও হাফিজুর রহমানের শার্টের কলার ধরে টানাঁহচড়া করতে থাকেন এবং মাটিতে পড়ে গিয়ে খালেক মাথায় আঘাত পান। তাকে কেউ মারধর করেনি।”

স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়।

ফলে গত ২০১৫ সালে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙ্গালী অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে তাদের পূর্বপুরুষদের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে।

এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বড় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ওই বছরের ৬ নভেম্বর ওই খামারের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ ও চার জন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন সাঁওতাল মারা যান।

পরবর্তীতে পুলিশ এক অভিযানে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এইসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে গত ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন।

পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

পরবর্তীতে হাই কোর্টের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে এবং গত ২৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে তারা।