গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ভিসির নির্দেশে, দাবি শিক্ষকের

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার আদেশ সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রশাসনের কাছ থেকে এসেছে বলে অভিযোগ করছেন সদ্য পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবির।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 04:04 PM
Updated : 22 Sept 2019, 04:17 PM

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে উপাচার্য খোন্দকার মো. নাসির উদ্দিন পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দিতে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।

গত চার দিন ধরে গোপালগঞ্জের এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ঠেকাতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য।

এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামলে বহিরাগত একদল হামলা চালায় শিক্ষার্থীদের উপর। এতে ২০ শিক্ষার্থী আহত হন।

সাবেক সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যাতে ভেতরে আসতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত হয় যে যারাই ভেতরে আসবে, তাদের যে কোনো মূল্যে ফেরাতে হবে। সেটা করতে গিয়ে দা, লাঠি, যত ধরনের দেশি অস্ত্র আছে, সেগুলো দিয়ে আমাদের স্টুডেন্টদের মেরে বিলের মধ্যে, রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।”

তিনি বলেন, “আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেই ছিলাম। যখন বৈঠকটা হয়, তখন আমি তার প্রতিবাদ করেছি যে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তারা আমার কথা মানে নাই। এ  কারণে আমি পদত্যাগ করেছি।”

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব ছাড়েন হুমায়ুন কবির।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

তার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক নাসির সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানতুল্য, তাদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছি। তাদের উপর হামলার প্রশ্নই ওঠে না।”

“এ (হামলার) ব্যাপারে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

হুমায়ুন কবির যে বৈঠকের কথা বলছেন, সে ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে ওই শিক্ষকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উপাচার্য।

এদিকে উপাচার্য নাসির এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশের পর  শিক্ষার্থীদের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ কিলোমিটার দূরে রাস্তার উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কোনো সহিংসতা না করার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও বলেছেন বলে জানান উপাচার্য।

“সন্তানতুল্য  শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস চিরন্তন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আরও ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। আমি ৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে সেটা করেছি।”

কোনো পক্ষ ‘নাশকতার’ জন্য শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ অধ্যাপক নাসিরের।

গঠিত তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সৃষ্ট ছাত্র কল্যাণ ফান্ড হতে নিয়ম মতো তাদের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করা হবে।”

গোপালগঞ্জের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে অসন্তোষ ছিল শিক্ষার্থীদের। তা নিয়ে ফেইসবুকে লেখায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কারের পর ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ কয়েকটি দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নিলেও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।