‘পুলিশের সহায়তায় ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ে’: সেই কাজী গ্রেপ্তার

লালমনিরহাটে ‘মামলা না নিয়ে ধর্ষণকারীর’ সঙ্গে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ে দেওয়া সেই কাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিআনিছুর রহমান লাডলা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2019, 04:29 PM
Updated : 21 Sept 2019, 04:39 PM

লালমনিরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, শনিবার দুপুরে কাজী শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একই দিন মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা এবং আদালতে জবানবন্দি নেওয়া হয় বলেও মোজাম্মেল জানান।     

গ্রেপ্তার শহীদুল সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বিবাহ ও নিকাহ রেজিস্টার কাজী। তবে ধর্ষণকারীর সঙ্গে শিশু শিক্ষার্থীর বিয়ের বিষয়টি তিনি বার বার অস্বীকার করে আসছিলেন।  

সদর থানার এসআই মাইনুল ইসলামের সহায়তায় কথিত ধর্ষণকারীর সঙ্গে সপ্তাম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন মেয়েটির বাবা।

এ ঘটনায় মেয়েটির বাবার অভিযোগ প্রথমে থানায় না নিলে তিনি জেলার এসপি, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেন। পরে এসপির নির্দেশে বুধবার রাতে সদর থানায় মামলা নেওয়া হয়। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

কাজী শহীদুলসহ এ মামলায় এ পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে গ্রেপ্তার করা হয় কথিত ধর্ষণকারী শাহীন আলমকে। মামলার আসামিদের নাম পুলিশ প্রকাশ করছে না।

এছাড়া বিয়েতে সহায়তার অভিযোগ ওঠায় সদর থানার এসআই মাইনুল ইসলামকে অন্য থানায় বদলি করা হয়েছে। 

পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, শনিবার সকালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ধর্ষণ ও গর্ভপাত নিয়ে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং বিকালে লালমনিরহাট জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফেরদৌসী বেগমের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, কাজী শহীদুল ইসলামকে আজ বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

তিনি বলেন, এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হলেন চারজন। পরে তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় কাজী শহীদুলকে আসামি করা হয়।

তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি মামলার অপর আসামিদের নাম প্রকাশ করছেন না।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, “ধর্ষক ও কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসআই মাইনুল ইসলামকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনার তদন্তে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” 

মামলার নথি থেকে জানা যায়, মেয়েটির এক প্রতিবেশীর বাড়িতে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতেন শাহীন আলম। তখন ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই মেয়েকেও সেখানে প্রাইভেট পড়াতে দেন তার বাবা। কিছুদিন পর শাহীন ওই শিক্ষার্থীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটি রাজি না হলে শাহীন তার মোবাইলে আগে গোপনে তোলা কয়েকটি ছবি দেখিয়ে হুমকি দেন যে যদি তার প্রস্তাবে রাজি না হয় তবে এসব ছবি এডিটিং করে খারাপ ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবেন। এভাবে ভয় দেখিয়ে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন ওই মেয়েকে। পরে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে গত ২৫ জুলাই তাকে কৌশলে লালমনিরহাট শহরের মেরিস্টোপ ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত ঘটান শাহীন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সদর থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর তা আমলে না নিয়ে ওই রাতেই থানার এসআই মাইনুল ইসলাম মেয়েটির বাড়ি গিয়ে মেয়েটিকে বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেলেপক্ষ বিয়েতে রাজি হবে। তখন মেয়েটির বাবা ‘নিরুপায় হয়ে’ এসআই মাইনুল ইসলামের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে ছেলেকে যৌতুক দেন।

২৩ অগাস্ট উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাজী শহিদুল ইসলামের বাড়িতে অফিসে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু কনের বয়স কম হওয়ায় কাজী বিযের কাবিননামা সরবরাহ করেননি বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

মেয়েটির বাবা বলেন, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাহীন আলম মেয়েটিকে বাবার বাড়ি রেখে পালিয়ে যান এবং বিয়ে তালাক হয়ে গেছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে দেন। এছাড়া ছেলেপক্ষ উল্টো এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে মেয়ের পরিবারকে।